‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন সরকারের দুরভিসন্ধি: সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ
সম্প্রতি জারিকৃত ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন সরকারের দুরভিসন্ধি এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের নতুন হাতিয়ার হিসেবে বর্ণনা করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৫ ধারার দোহাই দিয়ে জারিকৃত তথ্য পরিকাঠামো পরিপত্র প্রতারণামূলক। সাংবাদিক সমাজ এটা প্রত্যাখ্যান করছে। ১৫ ধারায় পুরো প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণার সুযোগ নেই।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
এ সময় সাংবাদিক নেতারা অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল এবং সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল ও সাংবাদিকদের অর্থদণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইনের সংশোধনীর উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাংবাদিকরা। মিছিলটি তোপখানা রোড থেকে কদম ফোয়ারা ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন অংশগ্রহণকারীরা।
বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বর্তমান মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত ও বাছির জামাল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসিম শিকদার, রিপোর্টার্স এগেইনেস্ট করাপশনের (র্যাক) সভাপতি মহিউদ্দিন, সাব-এডিটর কাউন্সিলের যুগ্ম সম্পাদক লাবিন রহমান, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশিদ আলম, নির্বাহী সদস্য আবদুস সেলিম, এ কে এম মহসীন ও জাকির হোসেন, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি জি এ এম আশেক উল্লাহ, সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সভাপতি এইচ এম দেলোয়ার, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক মো: শাহজাহান সাজু, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, নির্বাহী সদস্য রফিক লিটন, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত ইবনে মঈন চৌধুরী, মহাসচিব আবু হানিফ প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ গাযী আনোয়ার, জনকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা প্রমুখ।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, এই সরকার একের পর এক কালো আইন করে যাচ্ছে। এই আইন বাংলাদেশে কেউ মানবে না। এই আইন বাতিল না করলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব ‘কালো আইন’ বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৫ ধারার জারিকৃত তথ্য পরিকাঠামো পরিপত্র প্রতারণামূলক। সাংবাদিক সমাজ এটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল, ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ সংক্রান্ত পরিপত্র প্রত্যাহার এবং সাংবাদিকদের অর্থদণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইনের সংশোধনীর উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সাথে নিয়ে সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাবে। যে আন্দোলনে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, বিক্ষোভ নয়, আজ ঘৃণা প্রকাশের জন্য দাঁড়িয়েছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী এই সরকার সাজানো নির্বাচন করতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। আগামী নির্বাচনে যেন সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশ না করতে পারে সেজন্যই ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সকল কালাকানুন বাতিল না হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আসুন সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে সরকারকে বিদায় করি। তাহলেই সাংবাদিকদের সকল দাবি আদায় হবে।
বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করবে। একইসাথে এটি তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে যে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, সেটাকে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্যই মূলত এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের অপকর্ম ও দুর্নীতির তথ্য যাতে ফাঁস না হয় সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে আত্মরক্ষার কৌশল নিয়েছে। এ অপতৎপরতার নেপথ্যে যে সরকারের অসদুদ্দেশ্য ও দুরভিসন্ধি রয়েছে ঠাণ্ডা মাথায় তালিকা যাচাই করলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। মূলত আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ তালিকার মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। যারা নির্বাচনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে। সাংবাদিকরা যেন এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ সংগ্রহ বা প্রকাশ করতে না পারে-সেজন্যই এই প্রজ্ঞাপন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সংবাদমাধ্যমের ওপর এটি আরেকটি খড়গ।
বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, সকল কালাকানুন বাতিল করুন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা প্রত্যাহার করুন। সকল বন্ধ মিডিয়া খুলে দিন। তা নাহলে সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।