নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চট্টগ্রামের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, ভয় দেখিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে দমিয়ে রাখা যায়নি। চট্টগ্রাম থেকে সূচনা হয়েছে। এবার সারাদেশের মানুষ জেগে উঠবে। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে গদি থেকে নামিয়ে আনবে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য- শেখ হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে জনগণ আর একদিনও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাব।
তিনি বলেন, এই সরকার পুলিশ, র্যাব, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে। দেশে আজ কারও নিরাপত্তা নেই। দিনেদুপুরে মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি হচ্ছে। গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ পরিষ্কার করে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে- এদেশে কোনো মানবাধিকার নেই। র্যাব একটা প্রতিষ্ঠান, সেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, শুধু র্যাবকে নয়, শেখ হাসিনার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। আগের রাতে ভোট নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেছে। এই সরকার বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, পাঁচ নেতা হত্যাকান্ডের বিচার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর ও আবু সুফিয়ানের সঞ্চালনায় গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হয়ে গেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আমরা আবার যুদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। এ লড়াই বড় কঠিন লড়াই, বড় শক্ত লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। আমরা যদি প্রতিরোধ করতে না পারি, তাহলে এদেশের মানুষ তাদের অধিকার, গণতন্ত্র ফিরে পাবে না। এটা বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবকিছু লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। শেখ হাসিনা ১০ টাকায় চাল দেবে বলেছিল, এখন চালের দাম ৭০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, নুন, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম কয়েকবার বাড়িয়েছে। এখন শুনতে পাচ্ছি, বিদ্যুতের দাম নাকি আবার বাড়াবে। বারবার দাম বাড়াতে হচ্ছে কেন? কারণ তারা টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। এখন আবার শেখ হাসিনা বলছেন দুর্ভিক্ষ আসছে, আপনারা কম খান। আমরা বলি- দেশ চালাতে না পারলে ছেড়ে দিয়ে এখনই চলে যান।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করবে। জনগণ ভোট দিয়ে একটি সংসদ নির্বাচিত করবে, যেটা হবে জনগণের সংসদ। জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন। ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনারকে মানে না। এরা কিভাবে নির্বাচন করবে? নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া আজ বন্দি। তাকে রাজনৈতিক সাজা দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা করে তাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনব। আমার দেশ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনব, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান দেখেছেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে চাল-ডালসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাব। বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনব। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করব। যত সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো সমাধান করব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের একজন নেতাকর্মীও মামলা ছাড়া নেই। সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য আমাদের পাঁচজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এরা সবাই সাধারণ মানুষ। কেউ অর্থবিত্তের মালিক নয়। এরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে বলেছে- গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য বুক পেতে দিয়েছি, গুলি কর। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এই দেশকে আমরা মুক্ত করবোই।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের লোকজন কিছুদিন আগে এসে বলেছেন, এখানে গুম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টেও তারা বলেছেন বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। দেশে গুম হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হয়। এখানে বিচারবিভাগ স্বাধীন নয়।