সরকার পুনরায় গুম-গ্রেফতারের মাধ্যমে আন্দোলন দমন করতে চায়: বিএনপি
সরকার পুনরায় গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে চায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে দলটি। এর আগে সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অভিযোগ আনা হয়।
সম্প্রতি রাজবাড়ীতে বিএনপি নেত্রী ও সমাজকর্মী সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকের বিষয়ে বৈঠকে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফোরকান হোসেন ইরানকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাসেলকে র্যাবের আটকের বিষয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার পুনরায় গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে চায়। এ সময় অবিলম্বে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায় বিএনপি।
এদিকে, সম্প্রতি সরকার সার্কুলারের মাধ্যমে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় ২৯টি বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির বৈঠকে বলা হয়, যখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের জন্য দেশে এবং বিদেশে মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্বের গণমাধ্যমে বিরূপ সমালোচনা হচ্ছে, সেই সময়ে আরও ২৯টি বিভাগকে এই আইনের ১৫ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ হরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের লাগামহীন দুর্নীতিকে আরও প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি করা হলো। অবিলম্বে এই সার্কুলার প্রত্যাহার ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও রাজধানীসহ সারাদেশে অসহনীয় লোডশেডিং বৃদ্ধির বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও চরম অব্যবস্থাপনার কারণেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর ফলে একদিকে জনজীবনে সৃষ্টি হয়েছে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি, অন্যদিকে কৃষি, শিল্প ও পরিবহন খাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এই বিপর্যয়ের ওপরে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একটি সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করা হয়।
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। একই সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব ইউনিটকে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানায় বিএনপি।
গত ১০ অক্টোবর গাজীপুরে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত শোকর্যালিতে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বৈঠকে বলা হয়, পুলিশের আক্রমণে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। শোকর্যালি থেকে পুলিশ এক নারীসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে বলে দাবি জানায় দলটি। অবিলম্বে গ্রেফতারদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।