প্রধানমন্ত্রীর কাছে নায়েবে আমীরের পাঠানো চিঠির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে হেফাজত
কওমি মাদ্রাসার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সংগঠনের নায়েবে আমির ও গাজীপুরের দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর পাঠানো চিঠির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে হেফাজত আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহহিয়া ও মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান জানিয়েছেন, দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর চিঠির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘কওমি ধারার দ্বীনি শিক্ষা ও শিক্ষকদের মান উন্নয়নকল্পে সদয় দৃষ্টি কামনা’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর একটি চিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি হেফাজতের পক্ষ থেকে লিখিত কোনো চিঠি নয়। চিঠির বিষয়টি হেফাজতের কোনো ফোরামে আলোচনা করে তিনি প্রেরণ করেননি। এটি একান্তই তার ব্যক্তিগত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী হেফাজত আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহাম্মাদ ইয়াহহিয়া ও আতাউল্লাহ হাফেজ্জীসহ কারো সঙ্গে আলাপ করেননি। গণমাধ্যমের বরাতে বিষয়টি জানতে পেরেছে হেফাজত নেতৃবৃন্দ। সুতরাং, উল্লেখিত চিঠিটি হেফাজতের চিঠি হিসেবে বিবেচিত হবে না। এটি একান্তই অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর চিঠি। এর সঙ্গে হেফাজতের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রসঙ্গত, কওমি মাদ্রাসার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর ও গাজীপুরের দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। হেফাজত নেতার এ চিঠি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণে সভাও ডাকা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ নিয়ে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৫ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি দেন হেফাজতের নেতা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। ‘কওমি ধারার দ্বীনি শিক্ষা ও শিক্ষকের মানোন্নয়নকল্পে সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ’ শীর্ষক চিঠিতে মিজানুর রহমান আটটি সুপারিশ করেন।
এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কওমি মাদ্রাসার বোর্ডপ্রধানদের একটি বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় কওমি আলেমদের মধ্যে। কোনো কোনো দায়িত্বশীল আলেম মনে করছেন, সরকারের অভ্যন্তরের কারো পরামর্শেই মিজানুর রহমান চৌধুরী এ প্রস্তাব দিয়েছেন।
কওমি মাদ্রাসার দায়িত্বশীল আলেমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেওনার পীর হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী নিজে কোনো আলেম নন। এছাড়া কওমি মাদ্রাসার কোনো শিক্ষা বোর্ডেও তিনি নেই। শুধু গাজীপুরের দেওনা এলাকায় তার একটি মাদ্রাসা রয়েছে। অতীতে কওমি সনদের স্বীকৃতি বা এ জাতীয় কোনো কাজের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে কওমি মাদ্রাসার মান উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর তার চিঠি প্রেরণ এবং সে চিঠি আমলে নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের বিষয়টি কওমি আলেমদের বিস্মিত করেছে।