ব্যবসায়ী আনিসুরের দাফন সম্পন্ন, দ্রুত বিচারের দাবি পরিবারের
জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় নিজের গায়ে আগুন দিয়ে মারা যাওয়া কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও ব্যবসায়ী গাজী আনিসুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (০৫ জুলাই) রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর, জাসদ কেন্দ্র কমিটির সদস্য আব্দুল হান্নান, পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জসহ আত্মীয়স্বজন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে আনিসুরের মরদেহ লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। রাত ১১টা ২৫ মিনিটে পান্টি জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। রাত ১২টায় পান্টি কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
দাফন শেষে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদ হোসেন বলেন, অনেক রাত হলেও গাজী আনিসুরের জানাজায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। সেখানে উপস্থিত সবার চাওয়া ও দাবি, গাজী আনিসুরের মৃত্যুটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জাসদ কেন্দ্র কমিটির সদস্য আব্দুল হান্নান বলেন, আনিসের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থাকা দরকার ছিল। ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সর্দার মইন আক্তার বলেন, শুধু ব্যবসায়িক হতাশা নয়, তার দলীয় হতাশাও ছিল। যেহেতু ৩১ মে ফেসবুকে তার সমস্যা জানিয়েছিল। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের বিষয়টি দেখা উচিৎ ছিল।
এর আগে সোমবার বিকেল ৫টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় আনিসুর নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
গাজী আনিসুর কুমারখালীর পান্টি গ্রামের মৃত ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে। তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে। গাজী আনিসুরের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার দুপুরে হেনোলাক্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে তার ভাই নজরুল ইসলাম মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গাজী আনিসুর রহমানের কাছ থেকে হেনোলাক্সের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ফেরত দেননি। এ কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
আনিসুরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেনোলাক্স কোম্পানিতে মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি করে ফেরত না পাওয়ায় আনিস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, এটা জানতেন স্বজনরা। তবে আনিসুর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করবেন, এটা কেউ ভাবতে পারেনি। আগে অর্থ লগ্নির বিষয়টি নিয়ে স্বজনদের কারও কারও সঙ্গে আলোচনা করলেও গত এক মাস তিনি স্বজনদের কিছু বলেননি। নিহতের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।