বন্যায় তালিয়ে যাওয়া সুলতান নগরে এখনো কোমরপানি, নেই ত্রাণ সহায়তা

0

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের সুলতাননগর গ্রামে ৩০৫ পরিবারের বসবাস। এক সপ্তাহ আগে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের ৯০ ভাগ ঘর। এখনো বেশির ভাগ ঘরে হাঁটু থেকে কোমরপানি। এখনো কোনো ত্রাণ পাননি বলে জানিয়েছেন গ্রামের মানুষজন।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের ৬০টি বাড়ি এখনো পানির নিচে। উঠোনে বুকপানি। প্রতিটি বাড়িতে তালা দেয়া।

রমজান আলী নামে গ্রামের এক কৃষক জানান, পানিতে ভেসে গেছে তার ২০ মণ ধান। তলিয়ে গেছে ঘরের শোকেস-খাট। শনিবার (১৮ জুন) রাতে বন্যার পানি প্রবল বেগে ঘরে ঢুকতে শুরু করে। আতঙ্কিত হয়ে গভীর রাতেই তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন তিনি। ১০ দিন ধরে তার দু’টি গরু গ্রামের সামনের রাস্তায় কাদাপানিতে বাঁধা। ঘরে কোনো খাবার নেই। এখনো পাননি কোনো ত্রাণ ।

রোশেনা (৩৫) নামের স্বামীহারা এক নারী পাঁচ-ছয়টি শিশু নিয়ে বুক-সমান পানি ভেঙে ছুটে এলেন। তার ঘর দেখিয়ে বললেন, ‘দেহুইন মামা, আমার ঘরের ভিত্রে এহনো গলা পানি।’

রোশেনা দু’সন্তানকে নিয়ে গ্রামের উঁচু এক খুপরিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরে চাল–ডাল, তেল–নুন যা ছিল সবই পানিতে ভেসে গেছে। জিনিসপত্র কেনার মতো টাকাপয়সাও নেই হাতে। রোশেনা বললেন, ‘এই নয়-১০ দিনে আমরার গেরামে কেউ কোনো কিছু নিয়া আয় নাই।’

আনাম (৩০) নামের এক ইট শ্রমিক জানান, ঘরে তার তিন শিশু সন্তান। শনিবারেই (১৮ জুন) রাতে তার ঘরে পানি ওঠে। ভেজা কাপড়েই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যান তিনি।

কান্না করতে করতে আনাম বলেন, ‘কুমিল্লার এক ইটখলা থেকে ৪০ হাজার টাকা দাদন আনছিলাম, হের বিনিময়ে স্বামী-স্ত্রী আট মাস রইদে পুইড়া ইটখোলায় কাজ করছি। জ্যৈষ্ঠ মাসে বাড়িতে আয়া ঘর বানছি। ভাবছিলাম বাড়িতে কয়েকটা দিন থাকবাম। বন্যায় সব শেষ কইরা দিছে। কোনো খাওন নাই ঘরে, ফেডঅ (পেটে) খিদা, সরহার (সরকার) আমরারে কোনো কিছু দেয় নাই, একটু কইবাইন সরহাররে আমরারে কিছু দিতো।’

গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার পূর্ব দিকের অংশে ৩০টি ঘর পানি থেকে কিছুটা উঁচুতে। সেখানে অন্তত ৪০টি পরিবার গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে অসুখ-বিসুখ।

মো: কাজল মিয়া (৫০) নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ঘরবন্দী অবস্থায় আছি। গ্রামে কোনো নৌকাও নাই যে, হাট-বাজারে যাব। এ গ্রামে শতাধিক মেয়ে মাদরাসায় যায়। সবাই পানিবন্দী।’

তিনি জানান, সুলতানা নামে তার এক মেয়ে দাখিল মাদরাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। মাদরাসায় অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। চারটা পরীক্ষা দিয়েছে। বন্যার কারণে মাদরাসায় যাওয়া হয়নি আর। তাই পরীক্ষাও দিতে পারেনি। এ নিয়ে সে খুব কান্নাকাটি করেছে।

গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মো: আশরাফুল ইসলাম জানান, সুলতাননগরের মানুষ এর আগে কখনো এমন দুর্যোগে পড়েনি। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ নিয়ে সবাই শুধু দূরের হাওরে যাচ্ছে, এই গ্রামের গরিব মানুষেরা যে অসহায় অবস্থায় পড়েছে এই খোঁজ কেউ নিচ্ছে না।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com