তিন মাসেও খোঁজ মেলেনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইফাজের

0

প্রায় তিন মাস ধরে নিখোঁজ থাকলেও সন্ধান মেলেনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর সন্তান বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইফাজ আহমেদ চৌধুরীর। নিখোঁজ ছেলের সন্ধান চেয়ে আজ সোমবার বেলা ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইফাজের মা জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন,  ইফাজ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাকে খোঁজার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার সন্তানের কোন সন্ধান পাইনি। ইফাজ নিখোঁজ হওয়ার দিন গত ১১ এপ্রিল সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় জোহরের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। এ সময় তার ছোট বোনকে পড়ার জন্য বলে যায়। এবং নামাজ শেষে বাসায় এসে তাকে পড়াবে বলে যায়। দুপুর ২.২৬ মিনিটে ইফাজের স্ত্রী তার ব্যবহৃত নম্বরে ফোন দেয়। কিন্তু ইফাজ ফোন রিসিভ করেনি। এরপর থেকে তাকে ফোন দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ওইদিন বিকাল পার হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো খোঁজ না পেয়ে রাত ৮টায় মিরপুর মডেল থানায় নিখোঁজের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। জিডি নম্বর- ৭৭৫২। পরবর্তীতে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাই, আমার ছেলে মিরপুর ১ নম্বর এর একটি প্রাণী হাসপাতালে (চধি খরভব ঈধৎব) যায়। যেখানে ইফাজ ৩৮ মিনিট অবস্থান করে। ইফাজ যে পথ দিয়ে যায়, ঐ পথ দিয়েই বাসায় ফিরছিল।

সেখানে আমরা একটা কালো মাইক্রোবাস দেখতে পাই। আমাদের সন্দেহ ওই কালো মাইক্রোবাসে আমার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়েছে। এদিকে থানা থেকে আমাদের জানানো হয়, গত ২রা এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ইফাজ এর কললিস্ট পাওয়া যায়নি। কিন্তু এসময়ের মধ্যে পরিবারের সদস্য ও তার বন্ধুদের সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে যার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। সেদিন রাতেই আমরা জিডির কপি নিয়ে র‌্যাব-৪ এ যোগাযোগ করি। আমাদের আশ্বস্ত করা হয় যে পরদিন ১২টার মধ্যে আমরা একটা সংবাদ পাবো। কিন্তু তারা এ পর্যন্ত কোন সন্ধান দেয়নি। ইফাজের মা বলেন, গত ১৩ই এপ্রিল সকালে আমার বাবা কাজী মোমিন উদ্দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় গিয়ে সাক্ষাত করেন।

এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিরপুর থানা এবং র‌্যাব-৪ কে গুরুত্ব সহকারে তদন্তের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। এরপর আমরা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মশিউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করি। এরপর উনি একজন সহকারী কমিশনারকে (খলিল সাহেব) বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য নির্দেশ দেন। প্রায় দেড় মাস পরে তারা জানায়, ইফাজকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এরপর থেকে আমি পুনরায় থানা পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করি। আমার বাবা পুনরায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যান। সেখানে তিনি র‌্যাব হেড কোয়ার্টারকে তদন্তের জন্য বলেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেনকে নিখোঁজের ব্যাপারটি তদন্তের নির্দেশ দেন। আমি ডিআইজির সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকি। তিনিও ছেলেকে পেয়ে যাব বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইফাজের কোন সন্ধান পাইনি।

এমনকি ইফাজ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমাদের কাছে কোন অর্থ দাবি করেনি। আমার ছেলের সাথে কারও কোন প্রকার শত্রুতাও ছিল না। আমাদের জানা মতে, ইফাজ কোন ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তারপরও

আমার ছেলে যদি কোন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক। কিন্তু গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে আমার একমাত্র ছেলে নিখোঁজ রয়েছে। রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তার কোন সন্ধান দিতে পারছে না, নাকি দিচ্ছে না সেটাই আমার প্রশ্ন। একটা সুস্থ স্বাভাবিক ছেলে দিনে দুপুরে হাওয়া হয়ে যেতে পারে না। নিশ্চয়ই তাকে কেউ না কেউ জোরপূর্বক আটকে রেখেছে। তাহলে কি তারা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়েও বেশি শক্তিশালী? আমি আমার সন্তানকে ফেরত চাই। গণমাধ্যমের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট একমাত্র ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে সাহায্য প্রার্থনা করছি। ইফাজকে দয়া করে আমার কোলে ফিরিয়ে দিন। আপনিও একজন মা। আমার একটাই অনুরোধ দয়া করে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com