বিশ্ববাজারে কমেছে তেলের দাম, এবার সমন্বয়ের দাবি

0

ভোজ্য তেল আমদানিতে বিশেষ সুবিধা ও বিশ্ববাজারে মূল্য কমে যাওয়ার পরও দেশের বাজারে দাম না কমায় অবিলম্বে দেশে ভোজ্য তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

শুক্রবার (২৪ জুন) সকালে সংবাদ মাধ্যমে ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভোজ্য তেল আমদানিতে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহারে পর এপ্রিলে এসব সুবিধা নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি আমদানি করেছেন বড় মিল মালিক ও আমদানিকারকরা। গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুনঃনির্ধারণ করেছিল। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়ে ৩৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এরপর বিগত ৯ জুন কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়।

এর মধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। এ ক্ষেত্রে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারপ্রতি ৫-৭ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগতভাবে দাম কমার পরও দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিকবার দাম সমন্বয়ের আশ্বাস দিলেও সে আশ্বাসের ফল নেতিবাচকই এসেছে। তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ২০০-৪৯০ ডলার কমলেও দেশে তার বিপরীতে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এক মাসে দু’দফায় প্রতি লিটার সয়াবিনে দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল এক হাজার ৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে একপর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় এক হাজার ৯৫৬ ডলার। এপ্রিলে তা কমে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় এক হাজার ৯৪৭ ডলার। আর বর্তমানে টনপ্রতি এক হাজার ৪৬৪ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যখন বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়তি, তখন পণ্যটি আমদানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার ছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর ওই সুবিধা নিয়ে আমদানি কারা তেল দেশের বাজারে এলে দাম কমার কথা ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভোক্তারা তার কোনো সুফল পায়নি। বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশে তার বিপরীতে বাড়ানো হচ্ছে? যা শুধুমাত্র ব্যবসায় সুশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, ব্যবসায়িক নীতি নৈতিকতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। এর ফলে ভোক্তারা চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

দাম বৃদ্ধির পর্যালোচনা করে দেখা যায়- গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভোজ্য তেলের দাম পাঁচবার উঠানামা করে। এর মধ্যে তিন দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারসাজিতে অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বেসামাল হয় ভোজ্য তেলের বাজার। ফলে অক্টোবরে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৬০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে সময়ও বেঁধে দেওয়া দামে ভোজ্য তেল বাজারে পাওয়া যায়নি।

বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, দেশে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দাম বাড়াতে যতটুকু আগ্রহী, দাম কমলে কমাতে তেমন আগ্রহী না হওয়ার কারণে ভোজ্য তেলের বাজারে এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারকরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পর দীর্ঘদিনেও দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম সমন্বয় হয় না, যা খুবই দুঃখজনক। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে দাম বাড়ে, কিন্তু দাম কমলে ব্যবসায়ীদের উল্টো সুর বেশি দামে কেনা বা রেট বেশিসহ নানা অজুহাত।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com