বিনাভোটে নির্বাচিত ১০৮৩ চেয়ারম্যান-মেম্বার
চার ধাপে তিন হাজার ৪০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট ছাড়াই জয় পেয়েছেন এক হাজার ৮৩ জনপ্রতিনিধি। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ২৬৬ জন। বাকিদের মধ্যে ৬০৩ জন সাধারণ সদস্য (মেম্বার) ও ২১৪ জন সংরক্ষিত সদস্য। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী চেয়ারম্যানদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। এছাড়া প্রথম ধাপে ১৪১, দ্বিতীয় ধাপে ৩৬০ ও চতুর্থ ধাপে ১৩ জন রয়েছেন।
এদিকে তৃতীয় ধাপের এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ ও অষ্টম ধাপের ৯টি পৌরসভায় কাল ভোটগ্রহণ হবে। এ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫০ হাজার ১৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন ঘিরে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে ভোটের উৎসবের পাশাপাশি সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। এদিকে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের তফসিল আজ ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যেই প্রথম, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আর চতুর্থ ধাপের মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। সেখানে ভোট হবে ২৬ ডিসেম্বর। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এত সংখ্যক জনপ্রতিনিধি জয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও বিচারহীনতার কারণকে দায়ী করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজনীতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মনোনয়ন বাণিজ্য, জোরজবরদস্তি ও প্রভাব খাটিয়ে অন্য প্রার্থীদের মাঠছাড়া করলেও এর বিচার হচ্ছে না। যেসব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অন্য প্রার্থীদের সফলভাবে মাঠছাড়া করা যাচ্ছে সেখানেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন। আর যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঠছাড়া করা যাচ্ছে না, সেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হচ্ছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ চতুর্থ ধাপের ৮৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। এদিনই ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ধাপে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে কতজন একক প্রার্থী রয়েছেন তা গতকাল পর্যন্ত জানাতে পারেনি ইসি। আগামী ৬ ডিসেম্বর চতর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে। তখন এ ধাপের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে ধারণা করছেন ইসির কর্মকর্তারা। আগামী ২৬ ডিসেম্বর এ ধাপের ভোটগ্রহণ হবে।
আগামীকাল অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের আগেই জয় পেয়েছেন ৫৬৯ জন প্রার্থী। গত চার ধাপের মধ্যে এ ধাপেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জনপ্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেলেন। তাদের মধ্যে ১০০ জন চেয়ারম্যান রয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩২ এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন রয়েছেন। বাকি পদগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫০ হাজার ১৪৬ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান চার হাজার ৪০৯ জন, সংরক্ষিত সদস্য ১১ হাজার ১০৫ জন ও সাধারণ সদস্য ৩৪ হাজার ৬৩২ জন। কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এতে ভোটকেন্দ্র ১০ হাজার ১৫৯ ও ভোটকক্ষ ৬১ হাজার ৮৩০টি। এতে ভোটার রয়েছেন ২ কোটি ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৮ জন। শুক্রবার রাতে এসব ইউনিয়ন পরিষদে আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। মাঠে নেমেছেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা।
এর আগে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩৬০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৬ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন রয়েছেন। তার আগে প্রথম ধাপের ৩৬৪ ইউনিয়ন পরিষদে ১৪১ জন বিনা ভোটে জয় পান। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৭২, সংরক্ষিত নারী সদস্য ছয়জন ও ৬৩ জন সাধারণ সদস্য রয়েছেন।