দেশের ৮০ ভাগ নারী নির্যাতনের শিকার মতবিনিময় সভায় বক্তারা
নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ আন্দোলন আরো জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শতকরা ৮০ ভাগ নারী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার। কেবল সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সহিংসতা, নির্যাতন প্রতিরোধ করা যাবে না। কেননা এ ধরনের ঘটনার বিচারে এখনো আইনি জটিলতা রয়েছে। নির্যাতনের কথা নিম্ন শ্রেণির মধ্যে প্রকাশিত হলেও, উচ্চ শ্রেণির নারীরা তা প্রকাশ করতে পারে না। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে। গৃহের কাজে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে এবং নির্যাতনকারীর অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল সেগুনবাগিচায় সংগঠনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। ‘ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ-আসুন এ অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই’—এই শ্লোগান সামনে রেখে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ আন্দোলন আরো জোরদার করার লক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব ল, মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্সেসের কংগ্রেস চেয়ারম্যান এবং সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. মোজাহেরুল হক বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত নারী নির্যাতনের ঘটনার হার বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক। এটি প্রতিরোধ করতে প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে কোনো লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন এসেছে কি না সেটি দেখতে হবে। পাশাপাশি প্রতিরোধের লক্ষ্য অর্জনে কৌশলগত দিক ঠিক করতে হবে। কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস দূর করতে হবে।
সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, গণমাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার যে সব ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্বেগজনক। প্রকাশিত সব ঘটনার তথ্য সঠিকও নয়। পারিবারিক ফতোয়া বা সামাজিক ফতোয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে আসে না। জেলা পর্যায়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্র ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অনলাইন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। নারীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও নারী নির্যাতনের ইস্যুকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখে না।
মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন বলেন, বর্তমানে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে কাজ করতে হবে। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির কাজ মনিটর করতে হবে। প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন নাহার বলেন, সহিংসতার নানা ধরন রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ৮০ ভাগ নারী (সব শ্রেণির) বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর নারীরা নির্যাতনের শিকার হলে প্রকাশ করতে পারলেও উচ্চ শ্রেণির নারীরা পারে না। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে। মনস্তাত্ত্বিক দিক পরিবর্তন করতে হবে। ধর্ষণের শিকার নারী কন্যাদের স্বাভাবিকভাবে দেখার প্রবণতা তৈরি করতে হবে। অগ্রসর নারীদের ১ শতাংশ পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করতে চায় না সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে। সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে নির্যাতনকে মুখ বুজে সহ্য করে নেওয়ার মানসিকতা দূর করতে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক প্লেসে যেকোনো নির্যাতনের ঘটনায় ১০৯ নম্বরে ফোন করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
মতবিনিময়ে আরো বক্তব্য রাখেন আইনজীবী ও গবেষক জেয়াদ-আল-মালুম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক (অব) ডা. শাহিদা চৌধুরী, দলিত নেতা রামানন্দ দাস ও বনানী বিশ্বাস, প্রকৌশলী আসাদ দৌল্লাহ আল-সায়েম। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।