শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম নায়ক: মির্জা ফখরুল

0

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীর আলোচনায় অংশ নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম নায়ক ছিলেন তিনি।

শনিবার গাজীপুর জেলা মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন।

ছাত্রদল নতুন প্রজন্ম জিয়াউর রহমানকে কতটুকু জানেএমন প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা কিন্তু জানে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান, যুদ্ধ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগই হচ্ছে একমাত্র দল, তারাই শুধু যুদ্ধ করেছে, আর কারও কিছু করার ছিল না এখানে। কথা গুলো যে সত্য নয়, কথাগুলো যে সরকার উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে, একেবারে ইচ্ছে করে নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারে রেখে দিতে বিকৃতইতিহাস রচনা করছে, সেটাকে খণ্ডন করতে হবে, প্রকৃত সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে যে স্বাধীনতার ঘোষণাটা কীভাবে হয়েছে, কে দিয়েছিল, কেন দিয়েছিল।এখানে আলোচনায় এসেছে যে জিয়াউর রহমানকে তো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে কেউ চিনত না। তাহলে জিয়াউর রহমান কেন আবির্ভূত হলেন? তিনি যে একেবারে আকাশ থেকে শূন্যে পড়ে গেলেন, তা তো নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ঐতিহাসিক সত্য যে জিয়াউর রহমানই প্রথম নায়ক, যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধ দিয়ে গোটা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। অর্থাৎ একটা অন্ধকার সময়ে আশার আলো দেখিয়ে ছিলেন জিয়াউর রহমান।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক দিনের নয়। একেবারে মোগল আমল থেকে পরবর্তীকালে ব্রিটিশআমলসব সময় অঞ্চলের মানুষ লড়াই করেছে স্বাধীনতার জন্য। প্রীতিলতা, সূর্য সেন, তিতুমীর, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুতাঁরা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করার চেষ্টা করেছেন। পাকিস্তান হওয়ার পর শেরেবাংলা ফজলুল হক থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমানসবাই কাজ করেছেন, চেষ্টা করেছেন কীভাবে এই দেশকে স্বাধীন করা যায়।

একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটাজনমত তৈরি করে যে পাকিস্তান আমাদের শোষণ করছে। আর পাকিস্তান নয়, এখন আমরা আমাদের নিজেদের একটা দেশ চাই, নিজেদের ভূখণ্ড চাই, নিজেদের সরকার চাই। আকাঙ্ক্ষায় মানুষ যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে গেছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীট্যাংক, মর্টার নিয়ে যখন এই বাংলাদেশের নিরীহনিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন কিন্তু কোনো নেতাকে খুঁজে পাওয়াগেল না।

কেউ যখন কোথাও দিশা খুঁজে পাচ্ছিল না, সেই সময়ে এই জিয়াউর রহমান, অখ্যাত এক মেজর, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটা রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন, তিনি বেরিয়ে এসে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বললেন, উই রিভোল্ট। আমরা বিদ্রোহ করছি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এখন আসুন আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়ুন যুদ্ধে। সেখান থেকে লড়াইটা শুরু হয়।

বিভাজনের পথ তৈরি করলআওয়ামী লীগ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেভুলে গেলতারা জনগণকে কী আশ্বাস, কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। স্বাধীনতার চেতনা ছিল একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা মুক্ত, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজের। কিন্তু আওয়ামী লীগসেই পথে না গিয়ে বিভাজনের পথ তৈরি করল তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামীলীগ) বলতে শুরু করল, এক নেতার এক দেশ। এতে জাতি বিভক্ত হয়ে গেল। আর বললেন, জাতি একটাই, বাঙালি জাতি। কথা যারা বাঙালি নয়, যারা ভিন্ন অধিবাসী, নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী, তারা এটা মেনে নিল না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাঁরা যখন দেখলেন চতুর্দিকে যখন অস্থিরতা শুরু হয়েছে, জনগণের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না, লুটপাট শুরু করে দিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেদিন রক্ষীবাহিনী তৈরিকরা হলো। নতুন একটা বাহিনী, তারা ট্রেইনড ইন ইন্ডিয়া। এরা অতি দ্রুত নিপীড়নের মাত্রা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেল যে মানুষঅতি অল্প সময়ের মধ্যে এই দলের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু মন্ত্রী ছিলেন। তিনি একটা দল করতেন, দলটার নাম জাসদ। কেন এই জাসদতৈরি হয়েছিল? এই জন্য যে ওই দলের নেতাকর্মীরা, যাঁরা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে একটা শোষণহীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ বাকশাল করল। একটি ছাড়া আর কোনো দল থাকবে না। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওই খান থেকে জাতিকে উদ্ধার করল কে, এই জিয়াউর রহমান। কেন জিয়াউর রহমানকে আমরা এত পছন্দ করি, কী কারণে তাঁকে এত প্রাসঙ্গিক মনে করি, কেন মনে করি যে তাঁর মতো নেতা দেশে আর জন্মগ্রহণ করেননি।এই কারণে যে তিনি আবারও এই জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন যে একটা দল নয়, সব দলথাকবে। সেদিন এই আওয়ামী লীগও নতুন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছিল। কথাগুলো তারা কখনো বলে না, মানে না, শুনতেও চায় না।

আওয়ামী লীগ হচ্ছেবর্গি

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অনিয়মদুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছেবর্গিতারা ক্ষমতায় এলেই দেশে লুটপাট হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করলেও জবাব দিতে হয় না, খুন করলেও জবাব দিতে হয়না।

বাকশালেরপ্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সমস্যাও কিন্তু একই রকম প্রায়। বাংলাদেশ আবার ফ্যাসিবাদেরক বলে পড়ে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। দুনীতি চরমশিখরে পৌঁছেছে। এই সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশের স্বার্থ রক্ষা করছে।

এছাড়া সরকার হটাতে বিভক্তি ভুলে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com