ইসরায়েলি হামলায় নিহত হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতারা

0

ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লেবাননে অন্তত সাতজন হিজবুল্লাহর উচ্চপদস্থ কমান্ডার ও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটির প্রধান হাসান নাসরাল্লাহও রয়েছেন। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বৈরুতে হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ সদর দপ্তরে হামলায় তাকে হত্যা করা হয়। ইরানের সমর্থনে ১৯৮০ সালে হিজবুল্লাহ গঠিত হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত চালানো হামলাগুলোর মধ্যে এটিকে সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নিহত হিজবুল্লাহ নেতাদের তালিকা। তাদের বেশিরভাগই সেপ্টেম্বরে নিহত হয়েছেন। তারা কারা ছিলেন এবং কখন তাদের হত্যা করা হয়েছে তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে প্রতিবেদনে।

ফুয়াদ শুকর:

ফুয়াদ শুকর মুহসিন শুকর ও আল-হাজ মহসিন নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি হিজবুল্লাহ প্রধান নসরাল্লাহর বিশেষ সামরিক উপদেষ্টা ও সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ শুরা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। গত ৩০ জুলাই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে দক্ষিণ উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হারেত রেইত এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।

১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন মেরিন সেনাদের ব্যারাকে বোমা হামলার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় তিনি ছিলেন বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকার তার সম্পর্কে এবং তার অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

ইসরায়েলের দাবি, নাসরাল্লাহর ডান হাত এবং তার কৌশলগত বিষয় ও যুদ্ধকালীন অভিযান পরিচালনাবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।

ঈব্রাহিম আকিল:

হিজবুল্লাহর অভিজাত রাদওয়ান বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার এবং প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ঈব্রাহিম আকিল। লেবাননের বাইরে অভিযান পরিচালনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মনে করা হতো তাকে। ফুয়াদ শুকরের পর আকিলকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ধরা হতো।

বৈরুতে ১৯৮৩ সালের এপ্রিলে মার্কিন দূতাবাসে হামলা এবং শহরের মেরিন সেনা ব্যারাকে বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে তার মাথার মূল্য ৭০ মিলিয়ন ডলার ধার্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘স্পেশালি ডেজিগনেটেড গ্লোবাল টেরোরিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণের দাহিয়া এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।

আহমেদ ওয়েহবে:

হিজবুল্লাহর অভিজাত রাদওয়ান বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডার ছিলেন আহমেদ ওয়েহবে। দল গঠন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন তিনি। ২০ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণের দাহিয়া এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আকিলের সঙ্গে তিনিও নিহত হন।

ঈব্রাহিম কোবেইসি:

হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের নেতৃত্বে ছিলেন ঈব্রাহিম কোবেইসি। বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।

মুহাম্মদ সুরুর:

হিজবুল্লাহর নতুন প্রতিষ্ঠিত ড্রোন ইউনিটের প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ সুরুর। লেবানন থেকে ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় তিনি নিহত হন।

হাসান নাসরাল্লাহ:

লেবাননের শিয়া মুসলিম সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম পরিচিত এক মুখ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। ১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলি এক হেলিকপ্টার হামলায় তার পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি নিহত হন।

হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে হিজবুল্লাহর সদন দফতরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন। এসময় তার সঙ্গে আরও ২০জন হিজবুল্লাহ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

নাবিল কাওক:

হিজবুল্লাহর প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা পরিষদের কমান্ডার এবং এর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন নাবিল কাওক। ২০২০ সালের অক্টোবরে তাকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৈরুতের বাইরের চিয়া এলাকায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহত হন তিনি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com