কক্সবাজারে ছড়িয়ে পড়ছে এইডস, নেপথ্যে রোহিঙ্গা
সেনা নির্যাতনের মুখে দলবেঁধে কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিবিরে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয়রাও রয়েছে এইডস ঝুঁকিতে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশেও।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার বলছে, কক্সবাজারে বর্তমানে এইডস রোগীর সংখ্যা ৫৩৮ জন। এর মধ্যে ৩৯৫ জনই রোহিঙ্গা। এক বছর আগেও এই রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১১ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হলে এইডস রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত কলিম উল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণী কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে যাচ্ছেন। তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে রাত কাটাচ্ছে। ফলে গোটা কক্সবাজারেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ও এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টারের প্রধান ব্যক্তি ডা. শাহীন আবদুর রহমান বলেন, ২০১৫ সাল থেকেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি বা এইডস স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গা স্রোত শুরু হওয়ার পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ৫৩৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আক্রান্ত ৫৩৮ জনের মধ্যে ২১৯ জন পুরুষ, ২৫৫ জন নারী ও ৬৩ জন শিশু রয়েছে। একজন হিজড়ার শরীরেও এইচআইভির জীবাণু পাওয়া গেছে। গত বছরও এই সংখ্যা ছিল ৪১২ জন। ২০১৭ সালে ছিল ১৩২ জন। এ রোগে ২৯ রোহিঙ্গাসহ ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এইডস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি।
ডা. শাহীন আবদুর রহমান বলেন, ২০১৫ সাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালু করা হয়। যেখানে এইডস নির্ণয়, কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যারা আছেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল এইডস বা এসটিডি কর্মসূচি নামে একটি প্রকল্প চালু আছে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে ইউনিসেফের সহযোগিতায় হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের জন্য ‘প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমসিটি)’ নামে একটি প্রোগ্রাম চালু হয়। এ প্রোগ্রামে এইচআইভি পজিটিভ নারীর গর্ভের সন্তানটি যাতে সুস্থ থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ।
একটি সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছে, তাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারে থাকা অবস্থায়ই এই রোগে আক্রান্ত হন।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মান্নান বলেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সচেতনতার বিকল্প নেই।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মতিন বলেছেন, রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে কমই। প্রকৃত অর্থে এই রোগের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত ডা. রঞ্জন বড়ুয়া জানান, এইডস প্রতিরোধে জেলা সদর হাসপাতালে নানা উদ্যোগ ছাড়াও মাঠপর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ১২টি টিম কাজ করছে।