দৃষ্টি হারানোর পর চাকরি খুইয়ে দিশেহারা আসমা

0

আসমা খাতুন। বয়স ৪০ পেরিয়েছে। আয়া পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করতেন একটি বালিকা বিদ্যালয়ে। বছর তিনেক আগেও নিয়মিত গেছেন প্রিয় কর্মস্থলে।

শিক্ষার্থীদের চিপস, চকলেট এনে দেয়া থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়নসহ সব কাজেই ডাক পড়ত তার। কিন্তু হঠাৎ করে দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়ে খুইয়েছেন চাকরি! এখন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন অতীতের স্মৃতি।

পাবনার চাটমোহর পৌর শহরের কাজিপাড়া মহল্লার শামীম হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন ঘরের কোণে বসে অসহায় জীবনযাপন করছেন চিকিৎসার অভাবে! অসুস্থ হওয়ার পর নামমাত্র কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব সেরেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর পর খোঁজ নেননি কেউ। এমনকি ফিরেও তাকান না প্রতিবেশীরা।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, আসমা খাতুন দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরেরও অধিক সময় আয়া পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করেছেন চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৬০০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করে গত ২০ বছরে তার বেতন গিয়ে দাঁড়ায় চার হাজার টাকায়।

স্বামী একটি ইলেকট্রনিকস দোকানের কর্মচারী। দুজনের এ সামান্য আয়ে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে টেনেটুনে সংসার চালাতেন তিনি।

মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ইচ্ছে ছিল একমাত্র ছেলে আশিককে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন। কিন্তু তার সব স্বপ্ন এখন ফিকে হতে বসেছে। বছর তিনেক আগে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন আসমা খাতুন।

ডাক্তার দেখানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত তিনি। এর পর ধারদেনা করে এবং একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা করেন।

এর মধ্যে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন আসমা। চলে যায় চাকরি! এখন স্বামীর অল্প আয়ে কোনোমতে সংসার চললেও চিকিৎসা করানো দুরুহ হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ছেলের পড়ালেখা।

বিভিন্ন এনজিওর ঋণের চাপে দিশেহারা পরিবারটি। তবে উন্নত চিকিৎসা করালে চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রযেছে আসমা খাতুনের এমনটিই জানিয়েছেন চিকিৎসক।

৫ শতাংশ জায়গার ওপর টিনের ছাপড়াঘরে কোনোমতে স্বামী সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন আসমা খাতুন।

কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে না পেরে সেটিও বন্ধক রেখে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন না শোধ করতে পারছেন ঋণ, না পারছেন চিকিৎসা করাতে!

অসুস্থ হওয়ার পর স্কুলের পক্ষ থেকে দুই বারে ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন এমনটি দাবি করে অশ্রুসিক্ত নয়নে আসমা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, এত বছরেও আমার চাকরি স্থায়ী হয়নি। অল্প বেতন পেয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু অন্ধ হওয়ায় আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, মূল্যহীন হয়ে পড়েছি। তবে চোখের দৃষ্টি ফিরে পেলে আমি নতুন জীবন ফিরে পেতাম। আবারও কাজ করে সংসারের হাল ধরতাম। চিকিৎসা খরচের জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইসহাক আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘ইতিপূর্বে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে দৃষ্টিহীনতার বিষয়টি জানা ছিল না। যেহেতু জানলাম, সেহেতু আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে তার চিকিৎসার জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা করব।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com