আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে মামলা ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’: বাবুনগরী

0

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা আহমদ শফীকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’র অভিযোগে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। একইসঙ্গে শফীর মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রসঙ্গে বলা হয়, এটি হাজহাজারী মাদরাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং হেফাজত নেতাদের হয়রানির হীন চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি করা হয়। অন্যথায় দেশের ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে আলাপ করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (বড় মাদরাসা) মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেফাজত ইসলামের আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘রাজনৈতিক নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ও মন্ত্রীর কাছ থেকে ফায়দা লুটের জন্য মামলাটি করেছে। আহমদ শফী জীবিত থাকাবস্থায়ও তারা ফায়দা লুটেছে।’

‘তারা কারা’- এমন প্রশ্নে বাবুনগরী বলেন, ‘তারা চিহ্নিত দালাল। তাদের কয়েকজনকে চিনি। তবে এখন তাদের নাম বলবো না। দেশবাসী তাদের চেনে।’

আল্লামা আহমদ শফীকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে- এমন অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রামে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শিপলু কুমার দে’র আদালতে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শফীর শ্যালক মাইনুদ্দিন। মামলায় মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন ও মো. শহীদুল্লাহসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৮০-৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, হাটহাজারী মাদরাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আহমদ শফীকে নেয়ার আগে মাদরাসায় তার অক্সিজেন খুলে ফেলা হয়েছে। এ অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বাবুনগরী বলেন, ‘অক্সিজেন খোলা হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে আহমদ শফীর ব্যক্তিগত সহকারী (খাদেম) মাওলানা শফিউল আলম বলেন, ‘হুজুরের (আহমদ শফী) অক্সিজেন খোলা হয়নি।’ 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাদরাসার শিক্ষক ও হেফাজত ইসলামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আবছার আজহারী। এসময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলামের উপদেষ্টা মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির তাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, যুগ্ম সচিব নাছির উদ্দিন মুনির, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস, সহকারী অর্থ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান প্রমুখ।

হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা ওমর, মাওলানা ফোরকান, মাওলানা শুয়াইব, মাওলানা আহমদ দিদার, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা আবদুর সবুর প্রমুখ। 

শফীকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে- এমন অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে মামলা দায়েরের পর ওইদিন রাত ৮টার দিকে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর পাঠানো এক বিবৃতিতে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে হুমকি দেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব। 

বিবৃতিতে জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ‘শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক, যা দেশবাসীর সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তাছাড়া আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে মাওলানা ইউছুফ এবং হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন।’

একটি কুচক্রীমহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি মহল আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় তাকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। তাকে ব্যবহার করে নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তারা আলেমদেরকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে।’

‘অনতিবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে এবং এ মিথ্যা মামলায় কাউকে হয়রানি করা হলে পরামর্শ সাপেক্ষে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন হেফাজতের এ শীর্ষ আলেম।

এরইমধ্যে গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে প্রতিবাদী আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। 

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আল্লামা আহমদ শফী স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজত ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়াতের পরিবারের করা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ওলামা-মাশায়েকরা।

সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, একটি কুচক্রী মহল বিভ্রান্ত সৃষ্টির মাধ্যমে আলেম সমাজকে বিতর্কি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টে ষড়যন্ত্রকারী যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানানো হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com