আ.লীগ সরকার পার্লামেন্টকে পুরোপুরি একটা অকেজো পার্লামেন্টে পরিণত করেছে: বিএনপি

সরকার উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনডিপি প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের বিষয় আলোকপাত করে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বলা হচ্ছে যে, এই সরকার যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে। তারা নিজেরাই নিজেদের কথা বলছে এবং তারা নিজেদের একটা উন্নয়নের রোল মডেল বলছে। আজকের পত্রিকায় আছে যে, ইউএনডিপি গতকাল সোমবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গোটা এশিয়াতে কী অবস্থান, কোন কোন দেশ কী অবস্থায় আছে তাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াতে পঞ্চম, ভুটানেরও নিচে।’

তিনি বলেন, ‘এ থেকেই বোঝা যায়, আসলে আমাদের উন্নয়নের কথা যেটা বলা হচ্ছে এটা আসলেই জনগণকে পুরোপুরিভাবে বিভ্রান্ত করার একটা চেষ্টা। কারণ তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায় জোর করে টিকে থাকতে চায়।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আজকে সকল ক্ষেত্রেই সরকার স্বাধীনতার সমস্ত চেতনাকে ধবংস করে দিয়েছে। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে দলীয়করণ করে নষ্ট করেছে, তারা অর্থনীতিকে একটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকার পার্লামেন্টকে পুরোপুরি একটা অকেজো পার্লামেন্টে পরিণত করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আপনারা দেখেছেন যে, বিশিষ্ট নাগরিকরা তাদের বক্তব্য রাখছেন, বলছেন- এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না।’

দলের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে আমরা যে মূল চেতনাটির জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি, যুদ্ধ করেছি, প্রাণ দিয়েছি, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, অনেক মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের, সেই চেতনাকে পুনরুদ্ধার করা।’

তিনি বলেন, ‘সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং গণতন্ত্রের জন্য যারা সেদিন লড়াই করেছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন তাদের সেই মর্যাদাটাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করাই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মূল লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুঃখ হয় যখন দেখি, একজন অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। তাঁকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারান্তরীণ করা হয়।’

‘আমরা যখন দেখি যে, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অপমান করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রধান ছিলেন বা যারা সামনের সারিতে ছিলেন, যারা অগ্রণী ছিলেন তাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয় তখন দুঃখ হয়। আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালন করি এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাঁদের সম্মান প্রতিষ্ঠা করি এবং মূল যে লক্ষ্যটি ‘গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করি’- যোগ করেন তিনি। 

কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতা ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতিকূলতার মধ্যে দলের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা জনগণের কাছে গিয়ে করার শঙ্কার কথাও জানান মির্জা ফখরুল। 

তিনি বলেন, ‘করোনার প্রতিকূলতা ও বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিবেশ সেটাও আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি এবং স্বাধীনতার মূল চেতনাকে যারা ধারণ করি, লালন করি তাদের জন্য কোনও পরিবেশে কিভাবে আমরা পালন করতে সক্ষম হবো সেটাও আমরা জানি না। কারণ ইতোমধ্যে দেখছেন যে, গত কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতার চেতনাকে বিলুপ্ত করে দিয়ে, ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি যে, ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধের মূল যে চেতনা ছিলো সেই চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সরকার।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেছিলেন। আমাদের দলের আদর্শ ও লক্ষ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে কথাটা লেখা রয়েছে স্বাধীনতার চেতনাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। স্বাধীনতা আমাদের বড় অর্জন এবং এই স্বাধীনতাকে আজকে রক্ষা করাও আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আজকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। আমাদের সীমান্তে নাগরিকরা নিহত হচ্ছেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে। আমাদের দেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করেছে, তাদেরকে প্রত্যাবাসনের জন্য যারা সরকারে আছেন তারা সেরকম কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।