ফেনীতে অ্যাকশানে প্রশাসন, ১৭ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর সম্ভাব্য দ্বিতীয় ডেউ মোকাবেলায় ফেনীতে অ্যাকশানে নেমেছে জেলা প্রশাসন। জনগনকে করোনা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে মাস্ক পরাকে বাধ্যকরণে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন ম্যাজিষ্ট্রেটরা।
সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি আইন লঙ্ঘন করলে করা হচ্ছে জরিমানা। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে চলতি বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাস্ক না পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে ১৭ লক্ষ ২১ হাজার ৫’শ ৫০ টাকা।
এর মধ্যে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে ১ হাজার ৩শ’ ৯৮ জনকে। কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ২ জনকে। মামলা হয়েছে ১ হাজার ৩শ’ ৯৮টি। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়েছে ৩৬৫টি। দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮, ২৬৯ সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর কতিপয় ধারায় এসব জরিমানা আদায় করা হয়।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে ৩০টি ভ্রাম্যমান আদালতে ১২০টি মামলার বিপরীতে ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা, এপ্রিল মাসে ১৪৪ টি ভ্রাম্যমান আদালতে ৩৮৮টি মামলার বিপরীতে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ২শ’ টাকা, মে মাসে ৫৫ টি ভ্রাম্যমান আদালতে ২২৬টি মামলার বিপরীতে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা, জুন মাসে ৩০ টি ভ্রাম্যমান আদালতে ১৯৫টি মামলার বিপরীতে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা, জুলাই মাসে ২৮টি ভ্রাম্যমান আদালতে ১১৩টি মামলার বিপরীতে ৯৬ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা, আগস্ট মাসে ৩৫ টি ভ্রাম্যমান আদালতে ২১৮টি মামলার বিপরীতে ২ লক্ষ ৭২ হাজার ৪শ’ ৫০ টাকা জরিমানাসহ ২ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়, সেপ্টেম্বর মাসে ১৮টি ভ্রাম্যমান আদালতে ৪৪টি মামলার বিপরীতে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৩শ’ টাকা, অক্টোবর মাসে ৭টি ভ্রাম্যমান আদালতে ১২টি মামলার বিপরীতে ২ হাজার ২শ’ টাকা, সর্বশেষ নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ১৮টি ভ্রাম্যমান আদালতে ৮০টি মামলার বিপরীতে ১ লক্ষ ১২ হাজার ২শ’ টাকা জরিমানা করা হয়।
চলতি মাস থেকে এ কর্মকাণ্ড আরো জোরালো করেছে জেলা প্রশাসন। সম্ভাব্য দ্বিতীয় ডেউ ঠেকাতে নিজেদের সক্ষমতা নির্ণয়ের পাশাপাশি সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণায় জোর দিচ্ছে জেলা প্রশাসন, এর সাথে যোগ হয়েছে পৌরসভা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
অফিস-আদালত, শহর, হাট-বাজারসহ সর্বত্র যেন মাস্ক ব্যবহার করা হয় সেজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি দপ্তরের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় এবং দর্শনীয় স্থানে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নাগরিক সচেতনতায় বিলবোর্ড ও স্টিকার লাগানো হয়েছে।
মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’। এটি বাস্তবায়ন করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। মানুষদের মাস্ক পরতে সচেতন করা হচ্ছে এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের করা হচ্ছে জরিমানা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি দফতরগুলোতে পোস্টার ও ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। বর্তমানে টিকা হিসেবে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
মাঠ পর্যায়ে অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসনের অভিযানের ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতার তৈরী হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরতে অভ্যস্থ হচ্ছে। তবে এর ভিন্ন চিত্রও রয়েছে- যখন অভিযান চালানো হয় তখন পকেট থেকে বের করে মাস্ক পরেন। এটার জন্য সবার সচেতনতা হওয়া দরকার। নিজেদের প্রয়োজনেই মাস্ক পরা প্রয়োজন।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাজিয়া তাহের বলেন, উপজেলা পর্যায়ে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষদের মাঝে সচেতনতা তুলনামূলক কম, আর সে কারণেই মাঠে সক্রিয় রয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। জরিমানা করে বাধ্য করা হচ্ছে মাস্ক পরতে। এর সাথে রয়েছে মাস্ক বিতরণ এবং সচেতনা কর্মসূচিও।
দাগনভূঞা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করছি।
অভিযান পরিচালনাকারী ছাগলনাইয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোমায়রা ইসলাম জানান, অভিযানে যা অল্প টাকা জরিমানা করা হলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে এটি বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। অভিযানের ফলশ্রতিতে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা বেড়েছে।