ভ্যাকসিনেও ‘ব্যবসা ও লাভ’ খুঁজছে বাংলাদেশ

0

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসে দেশে দেশে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘই হচ্ছে। এখনও বহু দেশে শান্ত হয়নি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। করোনার ছোবল থেকে মানুষকে বাঁচাতে দেশে দেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু দেশ ও প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে। সেইসব ভ্যাকসিন এখন উৎপাদনের পর্যায়ে রয়েছে। 

তবে করোনা প্রতিকারক এইসব ভ্যাকসিন বাজানে আনা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিভিন্ন দেশ। এখন পর্যন্ত ৬টি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষার তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও ভ্যাকসিন শিল্প গড়ে তোলা যায় কিনা তার সম্ভাবনা খোঁজা শুরু হয়ে গেছে। এরই অংশ হিসেবে এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে একটি সরকার একটি সাব-কমিটিও করে দিয়েছে। 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বেশ কিছু ওষুধ কোম্পানির ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। ফর্মুলা পেলে তারা এটি উৎপাদন করতে পারবে। দেশে ভ্যাকসিন তৈরির ফর্মুলা ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। 

২০০৮ সালের ১২ আগস্ট টিকাদান কর্মসূচির প্রচলিত নিয়ম-পদ্ধতি মূল্যায়নের জন্য একটি সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিল। চলমান করোনা প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সেই সাব-কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে কমিটিতে আরও ১৬ জন সদস্য রাখা হয়েছে। যাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট খাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও শিক্ষকরা রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

সেই সাব-কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি টিকাদন নীতি হালনাগাদকরণে কাজ করবে। নির্ধারিত দায়িত্ব সম্পাদনের পর দেশে ভ্যাকসিন শিল্প স্থাপনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। এ কমিটি নতুন ভ্যাকসিন সংযোজন ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। টিকাদান কার্যক্রম সেবা ও বিদ্যমান কর্মসূচিতে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য মতামত দেবে। এমনকি এই সাব-কমিটিতে প্রয়োজনে কোনও ব্যক্তিকে সংযোজনও করতে পারবে। 

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভ্যাকসিনের বিষয় আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। এজন্য আমরা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করবো। আন্তর্জাতিকভাবেও যেসব জায়গায় যোগাযোগ করা দরকার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে তা আমরা করছি। আমরা ট্র্যাকে থাকতে চাচ্ছি।’

ভ্যাকসিন খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জানানো হয়, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা কর্তৃক তৈরিকৃত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রথম পর্যায়ে প্রাধিকার ভিত্তিতে ও সুলভে পেতে চায় বাংলাদেশ। বৈঠকে খাতসংশ্লিষ্টরা বিশেষজ্ঞরাও ভ্যাকসিন খাতের ব্যবসার সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। 

বৈঠকে জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কোনও একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির সুবিধার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছে, এমন কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে বাংলাদেশের জন্য দ্রুত ভ্যাকসিন পাওয়া সুবিধা হবে। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতকে অনুমোদিত ভ্যাকসিন উৎপাদন বা আমদানির সুযোগ দেয়া যেতে পারে।’

ওই সভায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র’ বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) জ্যেষ্ঠ সায়েন্টিস্ট ডা. কে জামান জানান, আইসিডিডিআর’বিতে এর আগে ১৫টি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে। সিনোভেক নামের একটি চায়নিজ প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে আইসিডিডিআর’বির চুক্তি হয়েছে। অনুমতি পেলে বাংলাদেশেও ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হবে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com