করোনাকালে খেলাপি ঋণের বিস্তার: ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি

0

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের এ উল্লম্ফন অনাকাঙ্ক্ষিত তো বটেই, একইসঙ্গে উদ্বেগজনকও।

করোনার সংক্রমণকাল বিবেচনায় সব ধরনের নিয়মিত ঋণ খেলাপি করা বন্ধ রয়েছে। তারপরও চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কেন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করল এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।

বিশ্বব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল সেক্টর অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের (এফএসএপি) খসড়া প্রতিবেদনে সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার বাড়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ হলেও বাস্তবে এর পরিমাণ আরও বেশি।

ইতোপূর্বে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- দক্ষিণ এশিয়ায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ভুটান ও আফগানিস্তান, যাদের খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯ এবং ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে চারগুণ। সরকার অবশ্য মুজিববর্ষ সামনে রেখে খেলাপি ঋণমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশন আইন ২০২০’-এর খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে, যেখানে বলা হয়েছে- খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে অন্য কারও কাছে লিজ দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা ব্যর্থ হলে ঋণখেলাপির পুরো সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা পাবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশন।

উদ্বেগের বিষয় হল, খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না দেশের ব্যাংকিং খাত। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়া।

সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গ্রাস করে ফেলছে এবং এর ফলে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে, যা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com