১১ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১০১৭৭ কোটি টাকা
চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকসহ মোট ১১ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হচ্ছে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঋণ অনিয়মে আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। জুন শেষে এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এ সময়ে রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৭৯৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের মার্চের তুলনায় জুনে এসে কিছুটা কমেছে। চলতি জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের ৮৯২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ও অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে, যা মার্চে ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ও ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর ঋণের ঝুঁকি বিবেচনা করে তার বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংকের প্রভিশন রাখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। আর প্রভিশন ঘাটতি রেখে কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এতে ওই ব্যাংকের শেয়ারে নিরুৎসাহিত হন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। একসময় কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে শুধু সতর্ক ও ঘাটতি মেটাতে দিকনির্দেশনা দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোনো ব্যাংকে টানা দুই বছর ঘাটতি থাকলে তার বড় অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এসব কারণে নানা উপায়ে প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। চলতি জুন শেষে এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা, যা মার্চে ছিল ৪৮৭ কোটি টাকা। গত তিন মাসে এই ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ১ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রভিশন ঘাটতিতে পরের অবস্থানে রয়েছে এবি ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চে ছিল ৬৮০ কোটি টাকা।
তিন মাসে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সামান্য কমে ৫৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া চলতি জুন শেষে ঢাকা ব্যাংকের ২০৩ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২৪৪ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১৯৮ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশাসনের অভাব ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণের খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাত চাপে রয়েছে। তারা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসের মহামারীতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতিকর কারণে চাপ আরও বাড়ছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার ব্যর্থতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল ভিত্তির প্রতিফলন এবং এতে আমানতকারীর অর্থেরও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ১১ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চের তুলনায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা বেশি। তবে এ সময়ে কিছু ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।