সংগ্রেস সভানেত্রীর পদে আর না থাকার ঘোষণা সোনিয়ার
ভারতে অন্তর্বর্তীকালীন কংগ্রেস সভানেত্রীর পদে আর না থাকার কথা রোববার দলকে জানিয়ে দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে কংগ্রেসের ২০ জনেরও বেশি প্রবীণ নেতা একটি চিঠি দিয়ে দলের জন্য ‘পূর্ণ সময়ের সভাপতি’ নিয়োগের দাবি জানান। তারপরেই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে যে, সোনিয়া গান্ধী এখনি পদত্যাগ করবেন নাকি নতুন সভাপতি সন্ধানের জন্য দলকে একটি সময়সীমা দেবেন।
জানা গেছে, আজই (সোমবার) এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বৈঠক বসতে চলেছে।
শনিবারই মোট ২৩ জন শীর্ষ নেতা একজন যোগ্য মুখ চেয়ে চিঠি লেখেন সনিয়াকে। একটি সূত্র বলছে, এর পরে নাকি ঘনিষ্ঠমহলে পদত্যাগের কথা জানান সনিয়া।
এদিকে, রাহুল গান্ধী বলেছেন, তিনি কোনোভাবেই কংগ্রেস সভাপতি পদে ফিরে আসতে চান না, বরং দলের হয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন আরএসএসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই করবেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরাও পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন যে, তিনি একজন সাধারণ সম্পাদিকা হিসাবেই থাকবেন, দলের শীর্ষপদের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নন।
এদিকে, যে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে তাতে স্বাক্ষর রয়েছে কপিল সিব্বল, শশী থারুর, গুলাম নবী আজাদ, পৃথ্বীরাজ চৌহান, বিবেক তানখা এবং আনন্দ শর্মার মতো প্রবীণ নেতাদের। দাবি করা হয়েছে, রাহুল গান্ধী যদি দলের সভাপতি পদ গ্রহণে ইচ্ছুক না হন তবে দলের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে উপযুক্ত নেতা বেছে নেয়া হোক। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল স্তর- সব জায়গাতেই আমূল সংস্কারেরও দাবি তুলেছেন কংগ্রেসের ওই পোড়খাওয়া প্রবীণ নেতারাই ৷
দলের নেতৃত্বে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় সাধারণ সদস্যরাও দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ছেন বলে চিঠিতে দাবি করা হয়। চিঠিতে দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনেরও আহ্বান জানানো হয়।
এই চিঠিটি প্রকাশ্যে আসার পরে সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের পরেই রাহুল গান্ধী দলের শীর্ষ পদ ছাড়েন। তারপরেই ৭৩ বছর বয়সী সোনিয়া সাময়িকভাবে দলের হাল ধরেন। কিন্তু নিজের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার কারণে কিছুদিন ধরেই তিনি দায়িত্ব ছাড়ার কথা বলছিলেন।
তবে এই চিঠিটি কংগ্রেসের মধ্যেই বিভেদ তৈরি করেছে। কিছু নেতা যেমন নতুন মুখ চাইলেও অমরিন্দর সিং, ভূপেশ বাঘেল এবং সিদ্দারামাইয়ার মতো নেতারা রাহুল গান্ধীর হয়েই কথা বলেছেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘সোনিয়া গান্ধীর উচিত যতক্ষণ সম্ভব এই কাজ চালিয়ে যাওয়া; তারপর রাহুল গান্ধঅকেই দায়িত্ব দেয়া উচিত।’
ছত্তিসগড়ের নেতা ভূপেশ বাঘেল টুইট করেছেন, ‘সম্মানীয় সোনিয়া জি এবং শ্রদ্ধেয় রাহুল জি যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ প্রতিটি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা আশার আলো দেখি, আমরা সবাই আপনাদের সঙ্গে আছি।’
সোমবারের নির্ধারিত কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের আগে কেন এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে গান্ধী পরিবারের অনুগতরা প্রশ্ন তুলেছেন। অমরিন্দর সিং বলেছেন, ‘বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর বিরুদ্ধে দেশটির সাংবিধানিক নীতি ও গণতান্ত্রিক নীতিমালা ধ্বংস রুখতে এখন প্রবল বিরোধিতার প্রয়োজন, এই সময় এ জাতীয় ইস্যু তোলার সময় নয়।’
ইদানীং কপিল সিব্বল ও শশী থারুরসহ বিভিন্ন প্রবীণ নেতারা দলের সংস্কারের জন্য চাপ দেয়া শুরু করেন। রোববার থারুর জওহরলাল নেহেরুর একটি উক্তি টুইট করেন যাতে লেখা ছিল, ‘আবেগ এবং তাগিদ না থাকলে আশা এবং প্রাণশক্তি ক্রমশ কমে যেতে থাকে, অস্তিত্বের অবনতি ঘটে, অস্তিত্বহীনতার আশঙ্কা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আমরা অতীতের কাছে বন্দি হয়ে আছি এবং এই অচলতা আমাদের ঘিরে ধরছে।’
একে তো রাহুল গান্ধী নতুন করে দায়িত্ব নিতে চান না, তার উপর সোনিয়াও জানিয়ে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার পক্ষেও আর কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঘোরতর সমস্যায় পড়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের তরুণ নেতারা মনে করছেন, দলের সিদ্ধান্তহীনতার ফলেই জনসমর্থন কমছে। এই অবস্থা থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসা যাবে ততই কংগ্রেসের জন্য মঙ্গলদায়ক, মনে করছেন তারা।
সূত্র : এনডিটিভি