এলজিইডির রাস্তা নির্মাণ-সংস্কারে মানহীন সামগ্রী
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় দেশের জেলা-উপজেলায় রাস্তা নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী তথা ইট, খোয়া ও পাথর ব্যবহার এবং যেনতেনভাবে কার্পেটিং, সঠিক পরিমাণ বিটুমিন ব্যবহার না করার কারণে রাস্তা নির্মিত হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যায়।
এমনকি এক পাাশ দিয়ে রাস্তা পাকাকরণ হচ্ছে, অন্য পাশ দিয়ে কার্পেটিং চটা ধরে উঠে যাওয়ার ঘটনাও ভুরি ভুরি। ‘ রাস্তার উন্নয়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বিটুমিনের পরিমাণ ও পাথরের গ্রেডেশন ঠিক আছে কি না তা নিশ্চিত করতে দেশের সব জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান। গত ১৬ আগস্ট নির্বাহী প্রকৌশলীদের পাঠানো ওই চিঠিতে কার্পেটিং কাজে বিল প্রদানের আগে প্রতি দুই হাজার বর্গমিটার পর পর নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে বিটুমিন এক্সট্রাকশনের মাধ্যমে বিটুমিনের পরিমাণ ও ব্যবহৃত পাথরের গ্রেডেশন টেস্ট করার নির্দেশ দেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় সড়ক নেটওয়ার্কের নাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এলজিইডির আওতায় সিটি করপোরেশন বাদে দেশের জেলা-উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির আওতায় দেশে মোট পাকা সড়কের পরিমাণ ১ লাখ ১৭ হাজার কিলোমিটার। এলজিইডির এই সড়কগুলোর বেশির ভাগেরই ভগ্নদশা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ সড়কগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, কী কারণে এলজিইডির এই সড়কগুলো নষ্ট হয় এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই জানা।
বিশেষজ্ঞদের মতে এলজিইডির সড়কের বেহাল দশার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বন্যা, নিম্নমানের কাজ ও নির্মাণ উপকরণ, অনিয়ম-দুর্নীতি, অদক্ষ ঠিকাদার, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, নকশার ত্রুটি ও অপ্রতুল বরাদ্দ। তবে মূলত দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ ও অনিয়ম-দুর্নীতিই এলজিইডির বিশাল সড়ক নেটওয়ার্ককে ভঙ্গুর দশায় নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালু ও পাথর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ এবং পাকাকরণে নিম্নমানের ও সঠিক পরিমাণ বিটুমিন ব্যবহার না করার কারণে রাস্তা নির্মিত হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, এলজিইডির রাস্তাগুলোর নির্মাণ ও সংস্কারে স্থানীয় যেসব ঠিকাদার কাজ করেন তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ঠিকাদার নিজে ক্ষমতাশালী কিংবা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় প্রভাব খাটিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রকৌশলীকে ম্যানেজ আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজ করিয়ে নিতে বাধ্য করেন।
এ প্রেক্ষাপটে ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় জেলা-উপজেলায় রাস্তার উন্নয়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বিটুমিনের পরিমাণ ও পাথরের গ্রেডেশন ল্যাবরেটরিতে যাচাই’ করা নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীদের চিঠি দেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান। চিঠিতে বলা হয়, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় সব জেলার রাস্তার উন্নয়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ২৫-৪০ মিমি কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। কার্পেটিং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিটুমিনের পরিমাণ ও ব্যবহৃত পাথরের গ্রেডেশন যাচাই করা প্রয়োজন। বিটুমিন এক্সট্রাকশন ও পাথরের গ্রেডেশনের ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলো। কার্পেটিং কাজে বিল প্রদানের আগে প্রতি দুই হাজার বর্গমিটার পর পর নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে বিটুমিন এক্সট্রাকশনের মাধ্যমে বিটুমিনের পরিমাণ ও ব্যবহৃত পাথরের গ্রেডেশন টেস্ট করার পর এই আইটেমের বিল প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া।’
এ ব্যাপারে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান বলেন, কাজের কোয়ালিটির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। এ ব্যাপারে আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলীরাও ওয়াকিবহাল। এই চিঠি দেয়ার উদ্দেশ্য এ ব্যাপারে আবারো তাদের একটু মনে করিয়ে দেয়া যে, বিটুমিন, কোয়ালিটি স্টোন (পাথর)Ñ সবগুলো যাতে ঠিক থাকে।
বিটুমিনের পরিমাণ ও ব্যবহৃত পাথরের গ্রেডেশন টেস্ট করার পর বিল প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে। এর মানে কাজের মান ঠিক না হলে বিল আটকে দেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী এই প্রতিবেদককে বলেন, বিল আটকে দেয়ার কথা চিঠিতে নেই। কাজের মান সঠিক না হলে, নির্বাহী প্রকৌশলীরা ব্যবস্থা নেবেন। কারণ বিপদ তো তাদের… তাদের বিষয়টি শুধু স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো, সাবধান করে দেয়া হলো।
যদি কাজের মান ঠিক না থাকে তাহলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি নির্বাহী প্রকৌশলীরা আমাকে বলে কাজের মান ঠিক হয়নি, তাহলে তিনি ঠিকাদার দিয়ে ঠিক করে নেবেন। ঠিকাদার যদি তা না করেন তাহলে সে (নির্বাহী প্রকৌশলী) আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সে যদি না পারে আমাকে জানাবে, আমার তরফ থেকে ব্যবস্থা নেবো। আমি না পারলে মন্ত্রণালয় আছে, মন্ত্রী আছে তাদের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।