খরগোশের গতিতে ব্যয় কচ্ছপের গতিতে কাজ
খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ২০১০ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে ২০১৩ সালে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত তিন দফা সময় ও ব্যয় বাড়ানো হলেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ফলে নতুন করে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এতে ভারতীয় ঋণ ১ হাজার ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা; সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা সরবরাহের কথা ছিল। বাস্তবায়নে বিলম্ব ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৩০ কোটি ২৬ লাখ ও ভারতীয় ঋণ পাওয়া যাবে ২ হাজার ৩৭১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে গেছে ২ হাজার ৮০ কোটি ২২ লাখ টাকা। তিন দফায় ১২০ দশমিক ৮৫ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে প্রকল্পের মূল কাজ রেলপথ নির্মাণে অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ শতাংশ।
প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। রূপসা নদীর ওপর হযরত খানজাহান আলী সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রেলসেতু। এই রেলপথে স্টেশন থাকবে ৮টি। ইতিমধ্যে খুলনা ও বাগেরহাটে ৭৫১ একর জমি অধিগ্রহণের পর মাটি ভরাট হয়েছে। রেলপাটি বসানোর জন্য বেড তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। ৮টি স্টেশনের মধ্যে দুটি স্টেশন বিল্ডিংয়ের ছাদ করা হয়েছে। অন্যগুলোর পাইলিং চলছে। তবে এখনো ট্র্যাক ও সিগন্যালিং নির্মাণ শুরু হয়নি।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, জমি অধিগ্রহণে দেরি, মাঝামাঝি এসে পরামর্শক পরিবর্তন, পাইলিং ব্যর্থ হওয়া, বেস গ্রাউন্ডিং ও সর্বশেষ করোনা মহামারীর কারণে নির্মাণকাজে দেরি হয়েছে। তবে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আশরাফ-উজ-জামানের অভিযোগ, দফায় দফায় বাজেট বাড়লেও কাজের মান ঠিক রাখেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। তারা অনভিজ্ঞ সাব-ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোয় জটিলতা বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট করা হলেও দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি ও বৃষ্টির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়। মে মাসে কাজ শুরু হয়েছে। তবে করোনার কারণে ভারত থেকে কোনো মালামাল আনা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। ইতিমধ্যে ৬৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।’