‘গাঙ্গে আর বন্যায় সব শেষ, বাঁচনও কষ্ট হইয়া গেছে’
‘করুনায় আর বন্যায় পোলাডার কাম নাই। চোখের সামনে বাড়িঘর ভাইঙ্গা গেল। মাইনষের বাড়িতে ছোট্ট একটা ঘরো আটটা মানুষ থাহি। গাঙ্গে ভাইঙ্গা আর বন্যায় সব শেষ। বাঁচনও কষ্ট হইয়া গেছে।’ কথাগুলো মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মার চরের আয়মন বিবির। ত্রাণ নিতে এসে এভাবেই নিজেদের কষ্টের দিনের বর্ণনা দিলেন এই নারী।
লৌহজংয়ে পদ্মাপারের গাওদিয়া গ্রামে পদ্মার চর, পাটুলির চর ও গাওদিয়া ইউনিয়নের ১০০টি বানভাসি পরিবারকে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ হিসেবে ছিল চাল, ডাল, লবণ, আলু ও পেঁয়াজ। এর আগে মুন্সিগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘুরে খাদ্য এবং অর্থসংকটে থাকা ১০০টি পরিবারের তালিকা তৈরি করে ওই সব পরিবারকে ত্রাণের চিরকুট দিয়ে আসেন।
মুন্সিগঞ্জের ওই অঞ্চলে নদীভাঙন ও বন্যা নতুন কিছু নয়। পদ্মাবেষ্টিত এ জনপদে প্রায় প্রতিবছরই ভাঙন দেখা দেয়, বন্যা হয়। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে রোজগারহীন হওয়া মানুষগুলো বন্যা আর নদীভাঙনের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। দীর্ঘ দেড় মাস ধরে বন্যা চলছে। ঘরহারা, বানভাসি পরিবারগুলোয় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যসংকট। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে সড়কের ওপরে, মানুষের বাড়িতে।
পদ্মার চর এলাকার কুদ্দুস ব্যাপারী ত্রাণ নিতে এসে জানান, তিনি তাঁর পরিবার, গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন গাওদিয়া এলাকার একটি রাস্তার ওপর। ফসলের মাঠে কাজ করে, দিনমজুরি করে যা উপার্জন হতো, তা দিয়েই ছয়জনের সংসার চলছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তাঁর আয় প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। প্রায় দেড় মাসের বন্যায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। নদীতে বিলীন হয়েছে বসতভিটাও। উপায় না দেখে সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন।
গাওদিয়া ইউনিয়নের পুরান চর এলাকার সোহরাব সিকদার বলেন, ‘বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলের জমি ভাইঙ্গা গাঙ্গে গেছে। কাম নাই। মাঝে-মইধ্যে ঘাস কাডার কামে যাই। এক সপ্তাহ হইলে হেই কামও নাই।’
গাওদিয়া গ্রাম থেকে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন ৯৮ বছরের ইসমাঈল ব্যাপারী। তিনি জানান, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলের সংসারে আছেন। ছেলেরা কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। কিন্তু করোনা ও বন্যার কারণে এখন তাঁরা বেকার। অর্থাভাবে চরম সমস্যায় আছেন তাঁরা। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যায় আমাগো অনেক কষ্ট। খাউনদাউনের ঠিক নাই। এক বেলা-দুই বেলা হাক-ভাত খাই। তুমাগো রিলিপ পাইয়া অনেক উপুকার অইল।’ একই এলাকার রাহেলা বেগম, রহিমা বিবি, দুধ মেহের, আমজাদ, সুরুজ মিয়ারা জানান, বয়স্ক মানুষ তাঁরা। এর আগে ত্রাণ নিতে এসে ঠেলাঠেলি করতে না পেরে অনেক সময়ই ত্রাণ ছাড়াই বাড়ি ফিরছেন। তবে এবার সেটা হয়নি।