বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য দূর হোক
করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে গণপরিবহনকে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে তুলনামূলক কম যাত্রী পরিবহন করতে হবে বলে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির প্রথমদিকে গণপরিবহনগুলো নিয়ম মেনে যাত্রী পরিবহন করলেও কিছুদিন পরই পাল্টে যায় চিত্র।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় ও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে বাসগুলোতে। এতে করে যাত্রীরা পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বেশকিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে : ১. একজন যাত্রীকে বাস/মিনিবাসের পাশাপাশি দুটি আসনের একটিতে বসিয়ে অন্য আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজার রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লেখিত মোট আসনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না।
২. বিদ্যমান হারে প্রচলিত ভাড়ার চার্টে যে ভাড়া আছে, তার সঙ্গে এবারের বৃদ্ধির হার যোগ করে নতুন ভাড়া নির্ধারিত হবে। ৩. স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে বাস ও মিনিবাস চালাতে হবে। ৪. অনুমোদিত ভাড়ার হার করোনাভাইরাসের এ সংকটের সময়ই প্রযোজ্য হবে। সংকট কেটে গেলে আগের ভাড়ার হার প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রজ্ঞাপনে জারি করা শর্তের কোনটিই মানা হচ্ছে না গণপরিবহনে। পাশাপাশি দুটি আসনের একটি ফাঁকা রাখার শর্ত যেন ভুলেই গেছেন গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ডাবল ভাড়া দিয়ে ডাবল সিটে দু’জন যাব কেন- এ প্রশ্ন করে কেউ প্রতিবাদ করলে তার ওপর চড়াও হচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
এদিকে মহাসড়কে চলাচলকারী আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। অধিকাংশ চালক ও কন্ডাক্টর মাস্ক ব্যবহার করছেন না। যাত্রী ওঠানামার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিটানোর কোন বালাই নেই। এমনিতেই সাধারণ মানুষ আর্থিক দুরবস্থায় রয়েছে, তার ওপর অতিরিক্ত ভাড়া যাত্রীদের কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। দুই মাস বন্ধ থাকার লোকসান পোষাতে বাস কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন শ্রমিক ও কন্ডাক্টরদের সঙ্গে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়তই। করোনা সংকটে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ বর্ধিত বাসভাড়া অবিলম্বে প্রত্যাহার করে আগের ভাড়া বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কিছু কিছু লোকাল বাস অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে, ভাড়া বেশি নিচ্ছে- এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে ম্যাজিস্ট্রেট-স্বল্পতায় সারা দেশে সমানভাবে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে সরকার গণপরিবহনে আগের নিয়ম ও ভাড়ার হার ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পূর্ণ বাস্তবায়ন অথবা আগের নিয়ম বহাল রাখাই হতে পারে এর সমাধান। তবে করোনাকালে আগের মতো গণপরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে নাগরিকদের। পরিবহন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও সাধারণ যাত্রী- সবার প্রচেষ্টায় আসতে পারে সমস্যাটির সুন্দর একটি সমাধান।