ঝুঁকি বাড়াচ্ছে পরিত্যক্ত সুরক্ষা সামগ্রী
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে গাজীপুরে সাধারণ মানুষের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লোভসের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু ব্যবহৃত এসব মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লোভস যেখানে সেখানে ফেলায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে আশংকা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন।
গাজীপুরে গত (১৯ আগস্ট) পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার হাজারের বেশি। সংক্রমণ বাড়ার কারণে গত কয়েক মাস ধরে গাজীপুরে বেড়েছে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, পিপিই ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বর্জ্যও অনেক বেড়ে গেছে। এসব ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এসব বর্জ্য থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় পরিষ্কারও করা হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে বুধবার নতুন করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২৬ জন। এ জেলায় মোট চার হাজার ৫৬৮ জন করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। গাজীপুরে করোনা ভাইরাসমুক্ত হয়ে ৩ হাজার ৩ জন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গাজীপুরে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৪২৮ জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় আছে ৫৪২, কাপাসিয়ায় আছে ৩১৯, শ্রীপুর ৫৬০ ও গাজীপুর সদরে দুই হাজার ৭১৯ জন।
সরেজমিনে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র পড়ে আছে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, পিপিই ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নানা ধরনের বর্জ্য। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা প্রতিদিন সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবে রাস্তাঘাট থেকে ময়লা আর্বজনা পরিচ্ছন্ন করছেন। কিন্তু বাসা বাড়ির ময়লার সঙ্গে ব্যাবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস ফেলা হচ্ছে। আর এসব বর্জ্য অপসারণ করতে অনেক সময় অনিহা প্রকাশ করছেন তারা।
গাজীপুর শহরের দক্ষিণ ছায়াবিথী, উত্তর ছায়াবিথী, লক্ষীপুরা, জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দনা চৌরাস্তার আশপাশের রওশন সড়ক, আউটপাড়া, ইটাহাটা, ভোগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হান্নান সরকার জানান, মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে আবার তা যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছে। এতে করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। ব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, শহরের যেদিকে যাবেন সবখানেই দেখা যাবে ব্যবহৃত মাস্ক পড়ে আছে। এগুলি থেকে করোনা ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্জিকাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস এবং পিপিই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পচনশীল নয়। এসব ব্যবহারের পর এগুলো ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ির বর্জ্যের মধ্যে। এতে বর্জ্য সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে অন্যান্যদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি তা পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে এগুলো সঠিক পদ্ধতিতে ধ্বংস করা না গেলে এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দ্রুত একটি গাইডলাইন তৈরি করা প্রয়োজন। ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলাও জরুরি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো অনেকেই ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য পিপিই ব্যবহার করছেন। ব্যবহার শেষে তারা এই সরঞ্জামগুলো রাস্তায়ই ফেলে দিচ্ছেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, হ্যান্ড গ্লোভস প্লাস্টিকের তৈরি। যার কারণে এসব বর্জ্য পচে না। ব্যবহারের পর যখন ফেলে দেয়া হচ্ছে সেগুলো হয় ড্রেনে যাচ্ছে নতুবা রাস্তায় পড়ে থাকছে। যেখানেই যাবে, এটি সঠিক পদ্ধতিতে ধ্বংস করা না হলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। ফলে এসব বর্জ্য কিভাবে অপসারণ করে পচনশীল করা যায় সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় এখন গৃহস্থালী বর্জ্যের সঙ্গে ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লোভস, পিপিইসহ বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। এসব ময়লা আবর্জনা পরিছন্নকর্মীরা নিতেও অনেকসময় অনিহা প্রকাশ করে। মানুষ এগুলি সেখানে সেখানে ফেলে রাখছে। এতে করে রোগব্যাধি আরো বেশি ছাড়াচ্ছে।
গাজীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক তপন কান্তি সরকার বলেন, এখন রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় চারদিকে সার্জিকাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, ফেস-শিল্ড, সার্জিকাল ক্যাপ এবং পিপিই পড়ে আছে। এসব সামগ্রী ব্যবহারের পর কিভাবে কোথায় ফেলা উচিত তা অনেকেই জানে না। যার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এগুলি নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া সেখানে সেখানে ফেলা উচিত নয়।