`ভারত থেকে নেমে আসা পানির কারণে বন্যা হয় বাংলাদেশে’
সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, বাংলাদেশে বন্যা হয় মূলত বর্ষায় ভারতের আসাম ও মেঘলায় থেকে নেমে আসা পানির কারণে।
তিনি বলেন, বন্যার পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ১৯৭২ সালে দুই দেশে বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর সরকার মিলে যে যৌথ নদী কমিশন গঠন করেছিল, তা এখন অকার্যকর। এ কমিশনকে কার্যকর করে বাংলাদেশের বন্যা ও বর্ষাকালীন পানির টেকসই ব্যবস্থা করা সম্ভব।
বুধবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক বন্যা: ক্ষয়ক্ষতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সভায় দেশের বন্যা প্রবণ এলাকার দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উঁচু করে বাঁধের মতো ‘বে’ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, বন্যার সময় বানভাসি মানুষ সেই বে’তে অবস্থান নিতে পারবে। ওই বে এমন পরিসরে তৈরি করা হবে যাতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও রাখা যায়।
তিনি বলেন, বন্যা প্রবণ এলাকার নদীগুলোর বাঁধ উঁচু করে বানালে অতিরিক্ত পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে আমাদের দেশে প্রতিবছর স্বল্প মেয়াদের বন্যার জন্য প্রস্তুতি রাখতে হবে। তাই দেশের বন্যা প্রবণ এলাকায় উঁচু করে বে তৈরি করা হবে।
দেশের বন্যা ও বর্ষাকালের পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার যে নেদারল্যান্ডসের মডেল অনুসরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে, সে কথা আলোচনায় তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি জানান, স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বানভাসি মানুষের সেবার জন্য নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে ৬০টি মাল্টিপারপাস বোট তৈরি করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের ডিসি আব্দুল আহাদ বলেন, চলমান বন্যায় হাওর অঞ্চলে সমন্বয় করে ৩৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশুও আশ্রয় পাচ্ছে।
ভবিষ্যতে উঁচু জায়গায় ধান মাড়াইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে ধান শুকানোর ব্যবস্থাও করা হবে।
হাওর এলাকায় আগাম বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাঁচাতে শস্য বিমা চালু করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখেন সুনামগঞ্জের ডিসি।
তিনি বলেন, হাওর এলাকায় বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পানি থাকে। সে সময় বজ্রপাতের প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। প্রতিবছরই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হয়। প্রাণহানি কমাতে হাওর এলাকায় বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড স্থাপন করা দরকার।
বন্যা প্রবণ এলাকায় অনেক দিন ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ওই এলাকার জনগণ আমাকে বলেছেন, তারা ত্রাণ চান না, বাঁধ চান। মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বন্যা প্রবণ এলাকার নদীর পাড়ে উঁচু করে বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা।
তিনি বলেন, বন্যা বন্ধ করা যাবে না, তবে এলাকাভিত্তিক পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের জানমালের ক্ষতি কমানো সম্ভব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোতাহর হোসেন বলেন, সরকার ইতিমধ্যে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে বন্যা প্রবণ এলাকার উঁচু জায়গায় এক কিলোমিটার পর পর পাবলিক টয়লেট করার ব্যবস্থা নিয়েছি। মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় বাঁধ উঁচু করা, বে নির্মাণসহ সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”
আলোচনার শুরুতে মূল প্রবন্ধে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস মো. কামরুজ্জামান বলেন, এবারের বন্যায় ৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের সম্পদ এবং গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। ৮১ হাজার ১৭৯টি টিউবওয়েল ডুবে গেছে। ৭৩ হাজার ৩৪৩টি ল্যাট্রিন ধ্বংস হয়েছে এবং ১ হাজার ৯০০টি স্কুল ভবন নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জামালপুর জেলা।