নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিচারবহির্ভূত হত্যা সংস্কৃতি মোকাবিলা করা উচিৎ
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড এডামস এক প্রতিবেদনে বলেছেন, পুলিশের হাতে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর সিনহা রাশেদ খানের খুনের ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে তাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতির সামনাসামনি এনে দাঁড় করিয়েছে। `নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিচারবহির্ভূত হত্যা সংস্কৃতি মোকাবিলা করা উচিৎ’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, বহু বছর ধরে কর্তৃপক্ষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে বা অপরাধ দমনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে সমর্থন জানিয়েছে। তারা বহু বছর ধরে এমন ধরনের ভুয়া দাবি মেনে আসছে যে, ভুক্তভোগীরা বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার বা আত্মরক্ষার্থে নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো গুলিতে মারা গেছে।
অবশেষে মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ড ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের দৃষ্টি ফিরিয়েছে। তবে এটা পরিষ্কার যে, সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান এই সমস্যা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশ-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অধিকার অনুসারে, বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীদের হাতে ১৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন চলতি বছর। তা সত্ত্বেও, এখন অবধি এসব ঘটনার মধ্যে একটিরও সফল প্রসিকিউশন হয়নি। এর আগে ঘটে যাওয়া শত শত হত্যাকাণ্ডের কথাতো বাদই।
পুলিশ মেজর সিনহাকে হত্যার পর প্রাথমিকভাবে তাদের পরিচিত আত্মরক্ষার কৌশল ব্যবহার করে। ৩১শে জুলাই কক্সবাজারের চেকপয়েন্টে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তিনি একটি তথ্যচিত্রের কাজ শেষ করে ফিরছিলেন। পুলিশ জানায়, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে। তারা আরো জানায়, সিনহার গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার করেছে তারা। গ্রেপ্তার করা হয় সিনহার সহযোগীদের।
তবে জনগণ ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সিনহার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিলে কর্তৃপক্ষ কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এখানে উল্লেখ্য, সিনহা একসময় প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর অংশ ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডে ২১ পুলিশকর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় ও নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও রয়েছেন, যিনি প্রকাশ্যে ক্রসফায়ারে খুন করার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি পূর্বে বলেছেন, ক্রসফায়ারের ভুক্তভোগীরা সবাই অপরাধী ছিল। তার এই অভিযোগ তদন্ত করার বদলে সরকার তাকে একটি পদক পুরষ্কার দিয়েছিল।
মেজর সিনহা হত্যার পরে গ্রেপ্তারকৃতদেরসহ অন্যান্য বেআইনী হত্যার অভিযোগগুলোকে স্বাধীন তদন্তের মধ্য দিয়ে পরিচালনা করা উচিত যাতে অপরাধীদের যথাযথভাবে আইনের মুখোমুখি করা যায়।
অবশ্য তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সিনহা হত্যাকাণ্ড ঘিরে তদন্তের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীর প্রধানরা। তবে উভয়েই আপাতদৃষ্টিতে কেবল ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ইচ্ছুক। তারা এ সিনহার হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছে। অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোকে ‘ক্রসফায়ার’ শব্দ ব্যবহারের জন্য দুষেছে।