বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড যেন আর না হয় : সিনহার মা
দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।’ অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) নেতারা গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরায় নিহত সিনহার বাসায় যান তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিক্রিয়া জানান নাসিমা আক্তার।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে ছেলের কথা স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সিনহা সবসময় বলত, আমি মানুষের জন্য কাজ করব, মানুষের হৃদয়ে থাকব। বলা নয়, কাজকর্মে বিশ্বাসী ছিল সিনহা। দেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে সবসময় চিন্তা করত। ছেলের প্রতিটি কর্মকা-ে আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। সবসময় কাজ করে সারপ্রাইজ দিত সিনহা। টাকা উপার্জন তার মুখ্য বিষয় ছিল না, মনের খোরাকের জন্য কাজ করত।’
ছেলের কর্মচাঞ্চল্যের কথা তুলে ধরে নাসিমা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার রাতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আমাকে ফোন করে সিনহার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। হত্যার পরদিন অর্থাৎ ঈদের দিন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ আমাদের উত্তরার বাসভবনে আসে। তারা সিনহার কর্মকা- ও রাজনৈতিক পরিচয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ নিয়ে চলে যান। সিনহার বিষয়ে চলমান তদন্ত কার্যক্রমে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে সিনহার বড় বোন ও সিনহা হত্যা মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘সিনহাকে আমি বলতাম, তুমি মানুষের হৃদয়ের রাজপুত্র (প্রিন্স অব পিপলস হার্ট)। এটা সে প্রমাণ করেছে, তার ভালো ব্যবহার আর গুণাবলি দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে বিচার হবে। আমাদের একটাই দাবি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যেন দ্রুতই বিচারটি হয় এবং এই বিচার যাতে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।’
এদিকে সিনহা ‘হত্যাকাণ্ডের’ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেনের প্রত্যাহার চেয়েছে রাওয়া। গতকাল সিনহার মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান রাওয়া চেয়ারম্যান মেজর খন্দকার নুরুল আফসার (অব.)। সিনহার মা নাসিমা আক্তারের সঙ্গে রাওয়া চেয়ারম্যান এবং সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল লে. কর্নেল এ এম মোশারফ হোসেন (অব.)-সহ একদল সাবেক সেনা কর্মকর্তা দেখা করেন।
রাওয়া চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিনহা হত্যাকান্ডের তদন্ত যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে বিচার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত হয় সেটি আমরা চাই। সিনহার ঘটনায় যারা কাস্টডিতে ছিলেন তাদের জামিন হয়েছে। আমরা অত্যন্ত খুশি, আলহামদুলিল্লাহ। সিনহা হত্যায় যে পুলিশ সদস্যরা জড়িত ছিল তাদের অস্ত্রগুলো যেন জব্দ করা হয়। হয়তো তদন্তের খাতিরে এটা করতেই হবে। যাদের ওপর তদন্তভার অর্পণ করা হয়েছে তারা অত্যন্ত দক্ষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করব তারা স্বচ্ছতা রক্ষা করবেন। কোনো পক্ষাবলম্বন করবেন না। হত্যার বিচার হলে সিনহার মা শান্তি পাবেন। ওসি প্রদীপ যেসব হত্যার সঙ্গে জড়িত সেসব হত্যার বিচার করা হোক। পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার করা হোক। এই ধরনের হত্যার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’
রাওয়া সিনহার বিচারিক তদন্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে লে. জেনারেল মইনুল ইসলামকে (অব.) প্রধান করে একটি কমিটি করেছে।