স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দুই সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

0

১৫ বছর ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন নজরুল ইসলাম (২৭)। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তার ডিউটি। কলাবাগান প্রথম ও দ্বিতীয় (লেন) গলির বাসাবাড়ি গিয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে গড়িতে তোলা তার কাজ। নজরুলের সঙ্গে যখন এ প্রতিবেদকের কথা হয় তখন তাকে মাস্ক, গ্লাভসসহ কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণ ছাড়াই আবর্জনা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

নজরুল জানান, চার মাস আগে তাকে এক জোড়া গ্লাভস এবং একটি মাস্ক দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দিন কাজ করতে গিয়ে গ্লাভসটি ছিঁড়ে যায়। এগুলো পরে কাজ করা যায় না, তাই পরেন না।

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সারা দেশে যখন ব্যাপক প্রস্তুতি ও জনসচেতনতা তৈরি হচ্ছেÑ ঠিক তখনই এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন ঝুঁকিতে। তাদের জন্য নেই দৃশ্যমান কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা।

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আক্রান্ত হলে তাদের মাধ্যমে আরও অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন। ভেঙে পড়তে পারে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও। সম্প্রতি পরিবেশবাদী গবেষণা সংস্থা এসডো জানিয়েছে, দেশজুড়ে এক হাজারের বেশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মী এখন অসুস্থ। স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানা কারণে কাজ ছেড়েছেন অনেকে।

এসডো মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হঠাৎ করেই যদি এ ব্যবস্থাপনাটা ভেঙে পড়ে তাহলে রাজধানী চরম ঝুঁকিতে পড়বে। এদের জন্য গাইডলাইন দরকার।’

সরকার করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহম্মেদ ওসমানি স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে বসবাসরত সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার প্রযোজ্য। হকার, রিকশা-ভ্যানচালক থেকে শুরু করে গণপরিবহন এবং অফিস-আদালতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সব শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে পরিচ্ছন্নতা এবং মশকনিধনকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, তাদের মাস্কও দেওয়া হয়নি। নিজেরা মাস্ক কিনে ব্যবহার করছেন। প্রত্যেককে প্রতিদিন কয়েকটি বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে। বহু মানুষের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে, কোনো সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই।

আবুল বাসার (৩১) নামে আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘১২ বছর ধরে এই কাম করতাছি। মৃত্যুর ভয় তো আমাগোও আছে। একটা মাস্ক আর এক জোড়া গ্লাভস দিছিলো চাইর মাস হইছে। ময়লা আনতে গেলে দেহি সাহেবরা মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই ময়লায় রাহে। ঝুড়িতে এগুলা না রাখতে বললে ছোট লোক বলে গালি দেয়।’

দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, উত্তরে কাজ করেন প্রায় চার হাজার আর দক্ষিণ সাড়ে তিন হাজার। দুই সিটিতে চুক্তিতে রয়েছে আরও প্রায় দুই হাজার কর্মী। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম সাইদুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে দক্ষিণের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘অনেককেই আমরা মাস্ক ও গ্লাভস দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই সবাইকে এর আওতায় আনতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। যাদের মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে এ দায়িত্ব তাদের।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com