‘মন্ত্রণালয়ও অধিদপ্তরের ভুলে ৩ হাজার চিকিৎসক সংক্রমিত, মৃত্যু ৭০ জনের’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভুলের কারণে ইতিমধ্যে প্রায় ৩ হাজার চিকিৎসক করোনায় সংক্রমিত হওয়া এবং ৭০ জন চিকিৎসক শাহাদতবরণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দেয়া এক চিঠিতে এ মন্তব্য করা হয়। চিঠিতে চিকিৎসকদের করোনাকালীন সময়ের কর্মঘণ্টা ও কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়ে জারি করা পরিপত্রটি অবৈজ্ঞানিক অভিহিত করে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, একটি মহল কৌশলে চিকিৎসকদের সরকার ও জণগনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, শুরুতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে অসংখ্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে, অনেকে অকাল মৃত্যুবরণ করেছেন। এ সকল ঘটনা আমাদেরকে বিষন্ন করে তুলেছিল। কিন্তু মধ্য এপ্রিলের পর সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির ক্রমোন্নতিতে আমরা আশার আলো নিয়ে নিরন্তর এক কঠিন সংগ্রামে আস্থাশীল হয়েছিলাম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে প্রায়ই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, যখনই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তার সকল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রবাহিত হয়, তখনই আপনার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরের কিছু আকস্মিক ও অবৈজ্ঞানিক আদেশ, পরিপত্র ও নির্দেশনা গোটা পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে।
একটি স্বার্থান্বেষী মহল অত্যন্ত সুকৌশলে চিকিৎসকগণকে জনগণ কিংবা সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে কিছু দূর্নীতি আর অনিয়ম থাকতে পারে’ কিংবা ‘চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিকিৎসকগণ একটি কিংবা দুটি টেষ্টের পরিবর্তে দিচ্ছেন দশটি টেষ্ট’ ইত্যাদি এ ধরনের অবান্তর, অবৈজ্ঞানিক ও দূর্নীতির স্বপক্ষে সাফাই গেয়ে কিছু বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়ে বর্ণিত সূত্রে আপনার মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রটি আমাদেরকে অবাক ও বিস্মিত করেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, পাশ্ববর্তী দেশ কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম বহির্ভূত এধরনের আদেশে দেশের সকল চিকিৎসক ক্ষুব্ধ।
চিঠিতে আরো বলা হয়, চিকিৎসকদের সংগনিরোধকালীন থাকার জন্য চার-পাঁচ তারকা চিহ্নিত হোটেলে থাকা, রুটিন সময়ের মতো করে তাদের থাকা খাওয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের খাওয়ার বিল কয়েক কোটি টাকা এসব বক্তব্য গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে স্বার্থান্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনেক ভুলের কারণে ইতিমধ্যে প্রায় ৩ হাজার চিকিৎসক করোনায় সংক্রমিত হওয়া, ৭০ জন চিকিৎসকের শাহাদতবরণ করার পরও চিকিৎসকদের করোনাকালীণ সময়ের কর্মঘন্টা ও কোয়ারেন্টিন থাকার অবৈজ্ঞানিক পরিপত্রটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি ও তা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।
চলমান অবস্থা বহাল রেখে দ্রুত এদেশের চিকিৎসকদের একমাত্র জাতীয় সংগঠন বিএমএ’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি বিজ্ঞানসম্মত উপায় বের করা কোন সমস্যা নয় উল্লেখ করে সংগঠনটি বলছে, আমরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কোন বিশেষ তারকা চিহ্নিত হোটেল, কোন ভাতা কিংবা কোন বিশেষ খাবার আমাদের চিকিৎসকদের চাওয়া ছিলো না। বরং চিকিৎসক দরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে যথাসম্ভব নিরাপদ উপায় অবলম্বন করে আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, পরিপত্র জারির ফলে আর কোন চিকিৎসকের সংক্রমণ/মৃত্যু কিংবা একারণে তাদের পরিবারের কোন সদস্যের সংক্রমণ/মৃত্যুর কারণ যেন না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সকলকে আরো সচেষ্ট, সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।