স্বাস্থ্যবিধি নেই লঞ্চঘাটে
ঈদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ পরিচালনাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গতকাল বুধবারও দাবি করেছেন, লঞ্চঘাটে স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল রাজধানীর সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। বেশিরভাগ প্রবেশ মুখে থার্মাল স্ক্যানার ও জীবাণুনাশক টানেল ছিল না। এমনকি যাত্রী প্রবেশের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নিরাপদ দূরত্ব মানা হয়নি।
এদিকে গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দাবি করেছেন, করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিতেও নৌপথ নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক করতে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সদরঘাটে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন ও যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের অবস্থান করার জন্য ‘মার্কিং’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাটের বেশিরভাগ প্রবেশমুখে ছিল না থার্মাল স্ক্যানার ও জীবাণুনাশক টানেল। যাত্রীরা যে যার মতো লঞ্চঘাটে প্রবেশ করছে। বেশিরভাগ যাত্রী মাস্ক ছাড়া ঘাটে প্রবেশ করছেন। করোনার সংক্রমণের তোয়াক্কা না করে আগের মতো ঘাটের যত্রতত্র ভিড় করতে দেখা গেছে যত্রীদের। ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর নিরাপত্তা কর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
ঘাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গিয়ে যাত্রীদের দ্বারা হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। তাদের দাবি, যাত্রীরা মোটেও সচেতন নয়। যাত্রীদের বোঝাতে গেলে আমাদের দিকে তেড়ে আসে।
লঞ্চঘাটে কোনো টানেল ও থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে নাএমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, সব প্রবেশমুখে থার্মাল স্ক্যানার ও জীবাণুনাশক টানেল রয়েছে। তবে কিছু কিছু টানেল নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো রিকভার করে পুনঃস্থাপন করা হবে। তাছাড়া নিরাপত্তা রক্ষার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাত্রীদের সচেতন করার জন্য। প্রতিমুহূর্তে মাইকিং করে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু যাত্রীরা কথা শুনছে না।
স্বাস্থ্যবিধি মানছে না লঞ্চ কর্তৃপক্ষও
করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রী চলাচলের কথা বলা হলেও প্রথম থেকে তা না মানার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে ঈদ যাত্রার শুরু হওয়ার পর তা আরও ভেঙে পড়েছে। গতকাল বুধবার লঞ্চঘাটে দেখা গেছে, বিকেল ৩টার পর থেকে একটু একটু করে ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেল গড়াতেই লঞ্চগুলোতে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার দেড়গুণ যাত্রী ওঠানো হয়।
যাত্রী পরিবহনের আগে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানোর কথা থাকলেও বেশিরভাগ লঞ্চে তা মানা হয়নি। লঞ্চের যাত্রী কিংবা কর্মচারী কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। যাত্রীদের স্যানিটাইজ না করে লঞ্চে তুলছে। লঞ্চের কর্মচারীরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ব্যাপারে ছিল না তৎপর।
ঢাকা-ভোলা-পটুয়াখালী-ভা-ারিয়া রুটের বেশিরভাগ লঞ্চে ছিল না কোনো জীবাণুনাশক টানেল ও থার্মাল স্ক্যানার। ডেকে যাত্রীদের অবস্থান করার জন্য ‘মার্কিং’-এর ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। উল্টো গাদাগাদি করে এসব লঞ্চে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এমনকি লঞ্চের ভেতর যাত্রীদের বেশির ভাগই মাস্ক পরছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা-কাউখালী রুটের এমভি মানিক লঞ্চের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আবদুল আলিম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যাত্রীদের নিরাপদ দূরত্বে রাখার। যাত্রীদের বারবার মাস্ক পরার জন্য বলা হচ্ছে। অনেকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। আমরাও এখন অনিরাপদ বোধ করছি।
লঞ্চের স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা নদী বন্দরের আহ্বায়ক মামুন অর রশিদ বলেন, প্রতিটি লঞ্চে সংক্রমণ ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা না মানলে আমরা কী করব। সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা মানতে গিয়ে আমাদের প্রতিদিন বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে ।
তিনি বলেন, আগে প্রতি ঈদে ১৯০-২০০ লঞ্চ যাতায়াত করত। করোনার কারণে এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিটি ট্রিপে দেড় লাখ টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। এভাবে কতদিন লঞ্চ চালাতে পারব জানি না। তবে সরকার যদি এদিকে নজর না দেয়, তবে লঞ্চ বন্ধ করে দিতে হবে।