সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫৬ শতাংশ, জুনে নিহত ৩৬৮
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে যান ও জনচলাচল কম থাকলেও জুন মাসে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৫৮টি দুর্ঘটনায় ৩৬৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫১৮ জন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জুনে রেলপথে ২০টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত, ৬০ জন আহত ও ১০ জন নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, জুন মাসে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬২ জন চালক, ১২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১৩ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ২১ জন বিজিবি সদস্য, ১৮ জন আনসার সদস্য, ১৩ জন পুলিশ সদস্য, পাঁচজন সেনা সদস্য, ২৮ জন শিশু, ২৩ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন রাজনৈতিক কর্মী, সাতজন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন প্রকৌশলীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ১১৬ জন চালক, ৯৮ জন পথচারী, ৪৯ জন নারী, ৪৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ২১ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, আটজন রাজনৈতিক কর্মী, সাতজন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন প্রকৌশলী, পাঁচজন পুলিশ ও দুইজন বিজিবি সদস্য।
জুনে ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২ দশমিক ১ শতাংশ বাস, ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৮ দশমিক ১১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ৮ জুন। সেদিন ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয় ১০ জুন। সেদিন আটটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও ১৪ জন আহত হন।
মোট দুর্ঘটনার ৫১ দশমিক ১২ শতাংশ গাড়ি চাপায়, ২৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে, ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ বিবিধ কারণে, ১ দশমিক ১২ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে এবং ০ দশমিক ৫৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেছিয়ে ঘটেছে।
পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুনে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩১ দশমিক ৫৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১ দশমিক ১২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়।
মে মাসের তুলনায় বিগত জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ৫৬ দশমিক ১৪ শতাংশ, মৃত্যু ৫৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ ও আহত হওয়ার হার ৪৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। সরকারের আন্তরিকতা ও বিগত নির্বাচনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেও বর্তমান সরকারের দুটি বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পদ্ধতি ঢেলে সাজানো ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’