উন্নয়ন প্রকল্প: কাজের নামে নাম নেই, বাড়ে শুধু মেয়াদ আর খরচ
দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর খরচ বাড়লেও কাজের কোনও গতি কিংবা অগ্রগতি চোখে পড়ে না। এমনকি অধিকাংশ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষও হয় না। উল্টো সময় ও মেয়াদ বাড়িয়ে খরচটাও বাড়ানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থাগুলো এখন এমনই নীতি ও মানসিকতায় চলছে।
পৌনে ৩ বছরের কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটির সাড়ে ১০ বছরে অগ্রগতি হয়েছে ৭১ দশমিক ৬৪ শতাং। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যণ্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে মোট ৬ বার। তাতে করে খরচ বেড়ে ৩০২ কোটি টাকা থেকে ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ না হওয়ার কারণে আবারও এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, যথাযথ পরিকল্পনা না করা, জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে এই দুর্দশা।
সাগর তীরে সামরিক প্রয়োজনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কক্সবাজার বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এটি বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে কার্গো ও যাত্রী পরিবহনের জন্য একটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত সব দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরটি উন্নয়নের জন্য ৩০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়।
২০০৯ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পরই ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ব্যয় ২৪৭ কোটি টাকা বা ১৮১.৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয। এরপর ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তাতেও প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তাতেও কাজে কোনও গতি আসেনি। বিপরীতে ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ।
এরপর ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় সংশোধনীর নামে ব্যয় এক লাফে ৬৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা বা ৩৯৪.২৯ শতাংশ বাড়িয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ ১ হাজার ১৯৩ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয়। পাশাপাশি মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়। এবারও বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রকল্পটি শেষ করতে ব্যর্থ হয়। তৃতীয় সংশোধনের নামে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়ানো হয়েছে।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর খরচ বাড়ে ৮২২ কোটি ৩২ লাখ ২২ হাজার টাকা বা ৬৬৬ শতাংশ। যা ব্যয় বৃদ্ধির রেকর্ড। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। আর মেয়াদ বেড় হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। সময় বৃদ্ধির হার হলো ৪০০ শতাংশ।
এ নিয়ে ৮ দফায় মেয়াদ বাড়ানো হলো। সবশেষ ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং খরচ হয় ১ হাজার ৪৪৩ কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এত বিশাল অংকের টাকা খরচ করে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি সাড়ে ১০ বছরে ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ বলে জানা গেছে।