পুলিশ আওয়ামী লীগের গোলাম ও দাসে পরিণত হয়েছে: এমপি হারুন

0

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের দেয়া সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘পুলিশের আইজিপি বেনজীর সাহেব নতুন নতুন অসিয়ত দিচ্ছেন। ওনার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই- আপনি বাংলাদেশের আমানত নষ্ট করেছেন। মানুষের হক নষ্ট করেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। তার জবাবদিহিতা আপনাকে করতে হবে না? গত নির্বাচনের সময় পুলিশকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।’

মঙ্গলবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। হারুন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন—পড়ে বাজেট বক্তব্য শুরু করলে, সংসদে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এটা দিয়ে শুরুর কারণ জানতে চান।

তিনি বলেন, ‘এটা দিয়ে বক্তব্য শুরুর রেওয়াজ আমি আমার সাত টার্মে এমপিদের মধ্যে দেখিনি।’ যদিও এমপি হারুন এর ব্যাখ্যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেননি।

আইজিপি বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য অবৈধভাবে কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কেউ যদি বড়লোক হতে চায়, তাহলে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করুক, বড়লোক হোক, আমরা তাকে সাধুবাদ জানা‌ব। কিন্তু, পুলিশে থেকে কোনোভাবেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা যা‌বে না।’

পুলিশের আইজিপির এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এ এমপি বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা দুর্নীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এই পুলিশ দিয়ে সৎ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পুলিশের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- তারা আওয়ামী লীগের গোলাম ও দাসে পরিণত হয়েছেন। আর সত্য বলতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হইচই করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সমাজে ঘুণ ধরে গেছে। চাঁদাবাজ, দুষ্কৃতকারী, মাদক পাচারকারী, অর্থ আত্মসাৎকারী, মানুষের হক নষ্টকারী ও সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারীরা এখন সমাজের ভদ্রলোক এবং ক্ষমতায় আছে- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। লজ্জা লাগে যখন আমরা দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সের কথা বলি। কিন্তু মাদকপাচারকারীদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এই সংসদে আসেন। তার স্ত্রী কী করে এই সংসদে আসলেন। এই বিষয়গুলো তদন্তের দাবি রাখেন। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে তারা এই সংসদে আসতে পারবে না।’

হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এমন এক সময় করোনার আঘাত বাংলাদেশে এসেছে, যখন দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায়। রেমিট্যান্স ছাড়া সব কিছুই ছিল একেবারে নিম্নমুখী। ব্যাংক খাত, শেয়ারবাজার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই নাজুক। এসব খাতে দরকার ছিল প্রণোদনা। এই দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে আমাদের করোনা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জের মাত্রা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতি কতদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে তার ওপর। জীবন বাঁচাতে হবে। খাদ্য জোগান এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে হবে। আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। যাদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় সরকার বেশকিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। এর বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সুশাসন ও সমন্বয় খুবই দরকার।’

তিনি বলেন, ‘অপরদিকে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে তা পর্যাপ্ত কী না এবং তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা আছে কি না? সেটাও প্রশ্ন রাখে। করোনাভাইরাসে সারা পৃথিবী বিপর্যস্ত এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় সরকারকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’

বাজেটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বাজেটে রাজস্বপ্রাপ্তির যে কথা বলা হয়েছে, তা হাস্যকর এবং অকল্পনীয়। কর খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় যেটা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে তা কোনোভাবেই আদায় করা সম্ভব হবে না। করোনাকালে যে ধরনের বাজেট প্রণয়ন করার দরকার ছিল, তা করতে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করব বাজেটটিকে সংশোধিত আকারে পাস করবেন।’

এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এ এমপি বলেন, ‘সামনে দেশে দুটি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে ইতিমধ্যে আগাম বন্যার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে খাদ্যের মজুত বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে আমদানি করে মজুত নিশ্চিত করতে হবে। যেন কোনো অবস্থানে মানুষ যেন না খেয়ে মারা না যায়।’

তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যাপবস্থাপনাসহ সামাজিক বেষ্টনী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর ব্যয় বাড়ানোর দাবি করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com