অন্তর্বতী সরকারকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালনের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে: তারেক রহমান

0

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বতী সরকারকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালনের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে। বহন করতে সক্ষম হবেন না এমন দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে নেয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারই কেবল গণতন্ত্র ও দেশে উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে। এই সরকারের প্রতি সেদিনও আমাদের সমর্থন ও আস্থা ছিল, আজও আছে। তবে এখানে একটি কিন্তু রয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ কিন্তু তাদেরকেই নিতে হবে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুলকে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, স্বৈরাচার পতনের এই মহাসময়ে দেশের গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা, কৃষক, শ্রমিক ও সর্বস্তরের মানুষের অবদানকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনার গুম, খুন, হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার জনতার অবদানকে যদি স্বীকৃতি দিতে না পারি, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

তিনি বলেন, আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি, যেখানে কারো কোনো ভয় নেই। সকলে আমরা শঙ্কামুক্ত পরিবেশে একত্রিত হয়ে কথা বলতে পারছি। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সাথে অন্যের কথা শোনার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র কদিন আগেও এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কথা বলতে পারত না। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীনভাবে বলতে পারতাম না। ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল।

তারেক রহমান বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল, দুলাল ও পলাশসহ বহু মানুষকে হারিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। জনগণের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগণের দাবি ছিল দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। গত ১৬ বছরে বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহিদদের, ৭১ এর শহিদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে।

তিনি আরও বলেন, আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে। যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে সবাই নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

তারেক রহমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আসুন আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।

তারেক রহমান বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১১ মিনিট বক্তব্য দেন। ১৬ বছর পর আয়োজিত বিএনপির এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com