করোনায় লন্ডভন্ড যুক্তরাষ্ট্র
করোনায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক শক্তিধর দেশটি করোনার কাছে যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সকে মৃত্যুপুরী করেছে করোনা। ইউরোপের সেই মৃত্যুর মিছিলে এখন উচ্চারিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। শুরুতেই বিশ্ববাণিজ্যের ফুসফুস নিউইয়র্ক সিটিকে পুরোপুরি অচল করে দেয় করোনাভাইরাস। নিউইয়র্ক এখন গৃহবন্দী। নিউইয়র্কের রাস্তা জনশূন্য। শপিং মল, বাজার থেকে শুরু করে ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনে কোথাও কেউ নেই। শহরে একজন আর একজনের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে চাইছে না। ব্যস্ত এই শহরের চেহারা একেবারে বদলে গেছে। চাপা আতঙ্কের মধ্যে শুধুই শোনা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন আর স্বজনহারানোর কান্না। লকডাউন করেও পার পায়নি তারা। মাত্র তিন দিন আগে নিউইয়র্কের গভর্নর স্বীকার করলেন, সব ধারণা, বিশ্লেষণী আগাম সতর্কতা কিছুই মানেনি ভাইরাসটি। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজারেরও বেশি। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ১৫২ জন। এ ছাড়া সঙ্কাটাপূর্ন আছে ৫,৪২১ জন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে হারে করোনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে তাতে অন্তত ১০ লাখ নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। করোনার ‘হটস্পট’ হিসেবে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি এবং কানেকটিকাটের কথা উল্লেখ করে এ তিন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেল সরকার। মহামারী চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছালেও নিউইয়র্কসহ বেশ কয়েকটি শহরে ইতিমধ্যে হাসপাতালে শয্যা সংকট শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ায় চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই হচ্ছে না রোগীর। চিকিৎসকদের অভিযোগ, অপ্রতুল প্রস্তুতির কারণেই দিন দিন বাড়ছে সংক্রমণ আর মৃত্যু। করোনা রোগীদের সেবায় যোগ দিয়েছেন পশু চিকিৎসকরাও। করোনায় নিউইয়র্ক শহরে লাশের মিছিল চলছে। ট্রাকে বোঝাই করে করোনায় মৃতদের শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নতুন রোগী ভর্তি করতে পারছে না হাসপাতালগুলো। শহরের বড় হোটেলগুলোকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে করোনায় আক্রান্ত এমন রোগীদের চিকিৎসায় গত রবিবার নিউইয়র্ক উপকূলে নোঙর করেছে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল-বিশিষ্ট মার্কিন নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে রাজ্যের পুলিশ এবং আপৎকালীন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যেও। এই অসুস্থ হয়ে পড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার ইত্যাদি প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের এই করুণ চিত্রের পেছনে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা ভাইরাসকে প্রথমত গুরুত্ব দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। বিভিন্ন সময়ে করা তার মন্তব্য থেকে এটি পরিষ্কার। টেস্ট কিট, ভেন্টিলেটর, পিপিই, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের যথেষ্ট মজুদ গড়ে তোলেনি যুক্তরাষ্ট্র। যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করা দরকার ছিল তার চেয়ে অনেক কম মানুষকে পরীক্ষা করা হয়। দেরিতে লকডাউনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলো।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে প্রথমে ১৫ দিনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা ঘোষণা করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই সময়সীমা ৩০ এপ্রিল অবধি বাড়ানো হয়। করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রে সব কারাগার ১৪ দিনের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। দেশটিতে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন বাড়তে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয় ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজন। করোনায় অনেক খারাপ খবরের মধ্যে একটি ভালো খবরও রয়েছে সেখানে। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ জুয়ার আসর, মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং এগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, অপহরণকারী ও চাঁদাবাজ গোষ্ঠীগুলো যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।