জনসংখ্যার বন্যা: কাশ্মিরে নতুন স্থায়ী বাসিন্দা আইন ঘোষণা ভারতের
ভারত সরকার অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরের জন্য এক গুচ্ছ নতুন আইন প্রণয়ন করার কথা ঘোষণা করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার ব্যবস্থা। তবে বিশেষজ্ঞ ও সেখানকার অধিবাসীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন আসবে।
নতুন আইনের অধীনে কোনো ব্যক্তি ভারত-শাসিত কাশ্মিরে ১৫ বছর বাস করলে কিংবা এই অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাত বছর পড়াশোনা করলে ও ক্লাস ১০/১২ পরীক্ষায় অংশ নিলে তিনি এখন থেকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এই অঞ্চলের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করার আট মাস পর ভারত সরকার নতুন আইনের কথা ঘোষণা করল।
কাশ্মিরিদের জন্য উদ্বেগ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা করা নতুন আইনে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তাদের (যারা এখানে মোট ১০ বছর দায়িত্ব পালন করবেন) সন্তানদের জন্য আবাসিক মর্যাদা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
ভারতে করোনাভাইরাসের জন্য ২১ দিনের লকডাউন চলা অবস্থাতেই এই ঘোষণা এলো।
ভারত সরকার গত ৫ আগস্ট ভারত-শাসিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে। ওই অনুচ্ছেদে ভারত-শাসিত কাশ্মিরের স্থায়ী অধিবাসীদের জন্য চাকরি, স্কলারশিপ ও ভূমির অধিকার নির্ধারিত ছিল।
আগস্টে অঞ্চলটির রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেয়া হয়, একে দুটি অংশে ভাগ করে উভয় অংশকেই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়।
প্র্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন যে এর ফলে অঞ্চলটিতে উন্নয়ন আসবে।
সুপ্রিম কোর্টে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার আদেশকে চ্যালেঞ্জকারী অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল কপিল কাক বলেন, এটি চুরি করে স্থায়ী অধিবাসী হওয়ার ব্যবস্থা। এতে কাশ্মিরিদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, এই প্রজ্ঞাপনের প্রভাব জম্মু অঞ্চলে হবে। কারণ কাশ্মিরে গত ১৫ বছরে খুব বেশি লোক আসেনি।
জনসংখ্যা বন্যা
কাশ্মিরিরা আশঙ্কা করছে, এর ফলে বহিরাগতদের মাধ্যমে স্থায়ী বসতি স্থাপন হবে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে জনসংখ্যার বন্যা দেখা দেবে।
ভারত-শাসিত কাশ্মিরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, এটা হলো জনসংখ্যা পরিবর্তনের প্রয়াস। কেবল পরিবর্তন নয়, বন্যা সৃষ্টি করা। এর ফলে জনসংখ্যার বন্যা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, এই আইনের পরিবর্তন চাকরি ইস্যুর চেয়ে বড় হবে। এখন আর চাকরি কোনো ইস্যু নয়।
এই অঞ্চলের আইন সমীক্ষাবিষয়ক অধ্যাপক শেখ শওকত হোসাইন বলেন, এর মাধ্যমে নানা শ্রেণীর ভারতীয়দের এখানে এনে বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালানো হবে।
তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এর ফলে এই অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীদের চাকরি নিশ্চিত হবে।
জম্মু ও কাশ্মিরের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অশোক কাউল বলেন, যারা ১৫ বছর ধরে কাশ্মিরে আছে, তারা উপকৃত হবে।
এই আইনের তীব্র সমালোচনা করেছেন কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। সদ্য কারাগার থেকে বের হওয়া এই নেতা বলেন, সবার নজর যখন করোনাভাইরাসের দিকে থাকা উচিত, তখনই এই আইন করা হলো।
কাশ্মিরের অনন্য পরিচিতি রক্ষা
এই অঞ্চলের মানবাধিকারকর্মী খুররম পারভেজ বলেন, এই আইনের ফলে বহিরাগতরা জম্মু ও কাশ্মিরের চাকরি দাবি করবে। অথচ এই অঞ্চলে আগে থেকেই রয়েছে বিশাল বেকারত্ব সমস্যা। এটা বেকার যুবকদের স্বার্থের পরিপন্থী আইন।