কোভিড-১৯: পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে কোন সার্ক জোট নয়
১৫ মার্চ সার্কের সদস্য দেশগুলো কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ভার্চুয়াল সম্মেলন করেছে। পাকিস্তান ছাড়া অন্য সব দেশগুলোর সরকার প্রধানরা এতে অংশ নিয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ড. জাফর মির্জা এতে অংশ নেন।
২০১৪ সালের সম্মেলনের পর এই প্রথমবারের মতো সার্ক নেতারা একসাথে বৈঠক করলেন। প্রতিটি সার্ক সদস্যের প্রচেষ্টা এখানে প্রশংসার দাবি রাখে। কেন একটা বৈঠক হতে এত দেরি হলো, সেটা বিবেচনার বিষয়। কিন্তু সার্ক কেন অকার্যকর হয়ে আছে, সেটা কারো কাছে গোপন কোন বিষয় নয়।
কি কারণে সার্কের ব্যাপারে ভারত সরকার তাদের অবস্থান বদলালো এবং এই ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করলো? নয়াদিল্লীর আঞ্চলিক সহযোগিতা নীতির ক্ষেত্রে এটা একটা কৌশলগত পরিবর্তন। এর অর্থ কি সার্ক তার বাধ্যতামূলক তৎপরতায় ফিরে যাবে এবং এ অঞ্চলের দ্রুত প্রবৃদ্ধির জন্য সক্রিয় হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনই দেয়ার উপায় নেই।
গত বছর ভারত সরকার দুটো কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে। সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরকে দুটো কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে, যেটার কারণে দেশের ভেতরে ও বাইরে চাপ তৈরি হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই প্রেক্ষাপটে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছে, যাতে দৃষ্টিটা ওইখান থেকে সরে যায় এবং দেশের সরকার অন্যদের থেকে কিছু সমর্থন পায়।
কিন্তু এমনকি এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের মাধ্যমে সার্ক যদি চাঙ্গাও হয়, এটা মনে রাখতে হবে যে, এই সংস্থাটি অচল হয়ে থাকার কারণ হলো ভারতের মাইনাস-পাকিস্তান ফর্মুলা।
বিগত ছয় বছর ধরে পাকিস্তান-ভারতের সম্পর্কের অবনতির কারণে সার্ক অকার্যকর হয়ে আছে। ইতোমধ্যে, অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো ভারতের নেতৃত্বে বিমসটেকের মতো নতুন আঞ্চলিক ব্লকের সাথে যুক্ত হয়েছে অথবা ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশকে নিয়ে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকে ঝুঁকেছে। এই সব ধারণার মধ্যেই যে ধারণাটা রয়েছে, সেটা হলো – পাকিস্তানকে বাদ দাও।
এইসব পদক্ষেপের অধীনে বিভিন্ন সহযোগিতামূলক প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সকল সহযোগিতার ক্ষেত্রে যেখানে একটি মাত্র সদস্য নেতৃত্ব দেয়, সেখানে অন্যান্য ক্ষুদ্র অংশীদারদের ইস্যুগুলো বিবেচনার অগোচরে থেকে যায়।
পশ্চিমের দিকে আমরা যখন তাকাই, দেখা যাবে, পাকিস্তানকে বাদ দেয়ার মূল্য দিতে হয়েছে অনেক বেশি এবং এ ধরণের পরিকল্পনাগুলোতে কেউ উৎসাহী হয়নি। প্রস্তাবিত চাবাহার পরিবহন লাইনটি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। এবং এমনকি বহু বছরের অব্যাহত চাপাচাপির পরও এখান থেকে অর্জন হয়েছে খুবই সীমিত।
পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২২০ মিলিয়নের বেশি। এদের প্রায় অর্ধেকই তরুণ, পরিশ্রমী ও উদ্যমী। এই দেশটি একটা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, যে জায়গাটিকে অগ্রাহ্য করার কোন উপায় নেই এবং যে জায়গাটি পূর্বের সাথে পশ্চিমের এবং দক্ষিণের সাথে উত্তরের সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে এই দেশটি ইসলামিক বিশ্বের, বিশেষ করে ওআইসিরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
নির্মানাধীন সিপিইসি যখন এগিয়ে যাচ্ছে, এটার কারণে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এবং পাকিস্তান দ্রুত মাঝারি শক্তির দেশের পর্যায়ে চলে যাবে।
সে কারণে উপমহাদেশে যে কোন আঞ্চলিক সহযোগিতা মেকানিজম পাকিস্তানকে ছাড়া হবে অসম্পূর্ণ ও অটেকসই। এটা হবে সার্বিকভাবে বিশ্বায়ন ও বহুপাক্ষিকতাবাদের ধারার বিপরীত। তাছাড়া সম্প্রতি যে মার্কিন-তালেবান শান্তি চুক্তি হয়েছে, সেটা পাকিস্তানের শক্তি আরও বাড়িয়ে দেবে।
চীনে একটি প্রবাদ রয়েছে: কাছের একজন প্রতিবেশী দূরের আত্মীয় স্বজনদের চেয়ে ভালো। পাকিস্তান ও ভারত ১৯৪৭ সাল থেকে একে অন্যের প্রতিবেশী। বিশ্বের মানুষ আশা করে পাকিস্তান ও ভারত তাদের মতবিরোধগুলো দূরে সরিয়ে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা পূরণ করার দিকে মনোযোগী হবে। সে কারণে কোন পূর্বশর্ত আরোপ ছাড়াই সার্কের মতো আঞ্চলিক সংস্থাকে শক্তিশালী করাটা এখন সময়ের দাবি। কোভিড-১৯ ভিডিও কনফারেন্স একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ কিন্তু এখনও কাজটা অর্ধেকই বাকি রয়ে গেছে।
(লেখক করাচিতে কর্মরত চীনের কনসাল জেনারেল)