ঘানির সংলাপ টিমকে তালেবানের প্রত্যাখ্যান: এর পর কি?
গত সপ্তাহে আফগান তালেবানরা আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির আলোচক টিমের সাথে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তালেবানদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, “সত্যিকারের স্থায়ী শান্তিতে পৌঁছতে গেলে এমন একটা আলোচক টিম গঠন করতে হবে, যে টিমের ব্যাপারে সকল আফগান পক্ষগুলো সম্মত হবে, যাতে এই টিম সকলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে”।
তালেবানদের অবস্থান নিয়ে কারো অবাক হওয়ার কথা নয় এবং কেউ যদি সামগ্রিক সঙ্ঘাত পরিস্থিতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে দেখেন, তাহলে শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য সেটাকে তেমন বাধা হিসেবে বিবেচনা করারও কিছু নেই। গ্রুপের কাছ থেকে যেটা প্রত্যাশা করা যায়, সেটাই তারা করছে: একজন রাজনৈতিক নেতারা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তারা প্রশ্ন করছে, যার শাসনামল দেশের ভেতরে ও বাইরে বৈধতা নিয়ে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে।
এটা মনে রাখাটা জরুরি যে, তালেবানরা একাই শুধু ঘানির আলোচক দলের সাথে বৈঠক করতে অস্বীকার করেনি। ঘানির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ – যিনি গত সেপ্টেম্বরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন – তিনিও তালেবানদের সাথে আলোচনার জন্য এই আলোচক দলকে সমর্থন করেননি। হামিদ কারজাই, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, আব্দুল রব রাসুল সাইয়াফ এবং রহমতুল্লাহ নাবিলসহ আরও যেসব রাজনৈতিক নেতাদের আফগানিস্তানে প্রভাব রয়েছে, তারা এই টিমের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। এই রাজনৈতিক নেতাদের সবাই চান কাবুলে এমন একটা সরকার থাকবে, যারা এই সকল রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থন নিয়ে তালেবানদের সাথে আলোচনায় বসবে। আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ আর আশরাফ ঘানির মধ্যে যেখানে দ্বন্দ্ব চলছে, সেখানে এমন সম্ভাবনা খুবই কম যে রাজনৈতিক নেতারা এখানে প্রেসিডেন্ট ঘানির একতরফাভাবে গঠিত টিমের ব্যাপারে তাদের সমর্থন জানাবে।
তাছাড়া, ঘানির দিক থেকেও তালেবানদের সাথে আলোচক দল গঠনের সিদ্ধান্তটি খুব তড়িঘড়ি করে নেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটার একটা জুয়ার সাথে তুলনা করা চলে যেটা আন্ত:আফগান শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও নষ্ট করবে। আব্দুল্লাহর সাথে কোন ধরণের চুক্তিতে না গিয়ে ঘানি আন্ত:আফগান সংলাপের ঘোষণা দিলে শান্তি প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই বৈধতা হারাবে।
আব্দুল্লাহ এবং আফগানিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক শ্রেণীর সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে ঘানিকে তালেবানদের সাথে আলোচনায় যেতে হবে। সেটা করা গেলেই কেবল তালেবানরা আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলোচনায় বসার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের আলোচনা থেকে ঘানির সুস্পষ্ট শিক্ষা নেয়া উচিত ছিল: ওয়াশিংটন তালেবানদের কাছ থেকে যা চেয়েছিল, সেটা তারা পায়নি যদিও আলোচনার টেবিলে আফগানিস্তানের সকল রাজনৈতিক পক্ষের সমর্থন ওয়াশিংটনের সাথে ছিল। এটা বোধগম্য নয় যে, ঘানি যেখানে তার সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা নিশ্চিত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে তালেবানদের সাথে কিভাবে সে দর কষাকষি করবে।
আন্ত:আফগান সংলাপ শুরুর সবচেয়ে ভালো সময় ছিল মার্কিন-তালেবান চুক্তি শেষ হওয়ার পরের মুহূর্তটি। এক মাস আগেও এই প্রক্রিয়ার বৈধতা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা একটা মাস অপচয় করেছে এবং ঘানি এখন একাই আলোচনার যে চেষ্টা করছে, সেটা ওয়াশিংটনের দুই বছরের প্রচেষ্টাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। ঘানি যেখানে তার অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে চুক্তিতে আসতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, সেখানে তার একতরফা পদক্ষেপকে ওয়াশিংটন কি সমর্থন দেবে? ঘানিকে সমর্থন দেয়ার অর্থ হলো আফগানিস্তানে রাজনৈতিক ঐক্য প্রচেষ্টাকে নষ্ট করে দেয়া। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এর অর্থ হলো এমন একজন নেতাকে অগ্রাহ্য করা, দেশের উত্তর ও পশ্চিমে যার শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে।
আন্ত:আফগান সংলাপের ব্যাপারে কিভাবে আগাতে হবে, সেই সিদ্ধান্তের জায়গাতেই শুধু হিসেবে ভুল করেননি ঘানি, বরং এই শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও যে সব পক্ষ জড়িত রয়েছে, তাদেরকেও অবমাননা করেছেন তিনি। আন্ত:আফগান সংলাপ এর চেয়ে খারাপভাবে আর শুরু হতে পারতো না।