ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা: ছদ্মবেশী ঝুঁকি
দক্ষিণ কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক অ্যারোস্পেস অ্যাণ্ড ডিফেন্স এক্সিবিশান অ্যাডেক্স-২০১৩ এ ভারত তাদের ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক মিসাইল প্রগতির প্রদর্শনী করে, যেটা তৈরি করেছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যাণ্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশান (ডিআরডিও)। ডিআরডিও কর্তৃপক্ষ যখন ভারতে ফিরে, তখন তারা মিসাইলটি তাদের জাহাজে উঠায়নি। বরং তারা দক্ষিণ কোরিয়ার ইনশিওন বন্দরে প্রায় এক মাস মিসাইলটিকে অরক্ষিত ও বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে রাখে। এরপর, একটি বাণিজ্যিক কার্গো জাহাজে মিসাইলটি ভারতে নেয়া হয় এবং এ ধরনের স্পর্শকাতর সামরিক সরঞ্জামের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন, তার কিছুই তাতে ছিল না। এটা কোন জোক নয়, নেহায়েত বাস্তব ঘটনা। ভারতের যুদ্ধক্ষেত্রের ট্যাকটিক্যাল মিসাইল – যেটা পারমাণবিক ওয়্যারহেড বহনে সক্ষম, সেটাকে অরক্ষিত ও বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল।
ডিআরডিও কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই কোন ডামি মিসাইল প্রদর্শনী করেনি। এর বদলে একটি সত্যিকারের প্রটোটাইপ মিসাইল প্রদর্শন করা হয়, যাতে সেটা প্রয়োজনে নিক্ষেপ করে দেখানো যায়। এই মিসাইলটি পরিবহনের ব্যাপারে ডিআরডিও কোন দায়দায়িত্ব নেয়নি। বরং তারা স্থানীয় একটি শিপিং কোম্পানিকে এই দায়িত্ব দেয়। এখন প্রশ্ন হলো এটা কি বড় ধরনের নিরাপত্তার ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন কি না। না কি ডিআরডিও ইচ্ছা করেই এটা করেছে যাতে অস্ত্র প্রযুক্তি আরও ছড়ানো যায়। এই সময়টাতে কি ঘটেছে? এই সময়টাতে ওই বন্দরে কারা মিসাইলটি নাড়াচাড়া করেছে, সে তথ্য গোপন রাখা হয়েছে! এই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না।
এটা এখন আর কোন গোপন বিষয় নয় যে, ডিআরডিও এবং ভারতের অন্যান্য পারমাণবিক সংস্থাগুলোর অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশের সাথে পারমাণবিক বাণিজ্য মিসাইল প্রযুক্তি বিনিময়ের ইতিহাস রয়েছে। এদের মধ্যে আছে লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, এবং ইরাক ও অন্যান্য দেশগুলো। পারমাণবিক আর্কাইভে ভারতীয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে, যারা অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও অস্ত্র বিস্তারের সাথে জড়িত।
এটা একটা বিব্রতকর বিষয় যে ভারতের মতো একটি দেশ যাদের কৌশলগত অস্ত্রাদি এবং পারমাণবিক কর্মসূচির নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটা দুর্বল, তারাই আবার নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে (এনএসজি) যোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। এখন মূলধারার পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে এটা বুঝতে হবে যে, এনপিটিতে স্বাক্ষর না করা সত্বেও ভারত যে স্বীকৃতি চাচ্ছে, তার অর্থ হলো ভারত দায়িত্বশীলতার সাথে কোন আচরণ করবে না। বরং সমাধানের মধ্যে ঢুকে ভারত তাদের প্রাধান্য বিস্তার ও সামরিক সম্প্রসারণের প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুধু দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্যই একটা সমস্যা হয়ে উঠবে।
ভারত এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেগুলোর আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং যেগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলো এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৭ সালে চীন-ভারত সীমান্ত অচলাবস্থা এবং ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বালাকোট অভিযান। এ ধরনের বিশাল সামরিক সম্প্রসারণের কোন অর্থ হতে পারে না, যেখানে এটা ব্যবস্থাপনার তাদের সামর্থ নেই এবং যেটাকে তারা অস্ত্র বিস্তারে এবং নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে অন্যদের কুৎসা রটানোর জন্য ব্যবহার করছে। সে কারণে, ভারতের ডিআরডিও আসলে ছদ্মবেশী একটি ঝুঁকি। কারণ নিজেদের সরঞ্জামগুরোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার সামর্থ তাদের নেই এবং সে কারণেই তারা পাকিস্তান ও চীনের বাণিজ্যিক বিনিময় নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিআরডিও এবং কান্ডলার দিনদয়াল বন্দর কর্তৃপক্ষ হংকংয়ে নিবন্ধিত একটি বাণিজ্যিক কার্গো জাহাজ দা চুই ইউনকে আটকে দেয়, যেটা পাকিস্তানের করাচির পোর্ট কাসিমের উদ্দেশে যাচ্ছিল। তারা দাবি করে যে, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, জাহাজে সন্দেহজনক সরঞ্জাম পরিবহন করা হচ্ছে, যেগুলো পারমাণবিক মিসাইল তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে।
এনএসজিতে চীনের বাধার কারণে ভারতের সদস্যপদ বারবার প্রত্যাখ্যান হওয়ার কারণে হতাশ ভারত এখন চীন-পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতাকে খাটো করার পেছনে লেগেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ভারতকে তাদের বস্তুগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়াটা বন্ধ করতে হবে। কারণ এই ধরনের সুবিধাকে ভারত অপব্যবহার করেছে এবং এখন তারা ভুয়া অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এটা নিশ্চিতভাবে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করবে।