মোদি-যোগির রাজ্যে ক্ষুধার জ্বালায় ঘাস খাচ্ছে শিশুরা
ভারতে লকডাউন চলাকালীন খিদের জ্বালায় ঘাস খাচ্ছে শিশুরা৷ শুনে অদ্ভুত মনে হলেও এই ঘটনাটি ঘটেছে বাস্তবেই৷ আর সেটা খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লোকসভা কেন্দ্র বারানসীতে৷
আবার যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যেও বটে, যিনি দেশের এই বিপদের সময়েও রামমন্দির নিয়ে সমানে রাজনীতি করে যাচ্ছেন৷ বারানসীর বড়াগাঁও এলাকার কৈরিপুর গ্রামের ছটি শিশুর নুন দিয়ে ঘাস খাওয়ার এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে৷ কর্মকর্তার পৌঁছে যান রেশনের সাহায্য নিয়ে৷ মোদির লোকসভা এলাকায় এ হেন চিত্র ধরা পড়াতে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে৷ অনেকে ব্যঙ্গ করে বলছেন, এটাই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার দেশজুড়ে ২১ দিনের লকডাউনের ঘোষণা করেন৷ দিন আনা দিন খাওয়া দরিদ্র মানুষরা চরম দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে এই পরিকল্পনাহীন লকডাউনের ফলে৷ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে বারনাসীর মানুষদের সঙ্গে মনের কথাও বলেছেন মোদি৷
কিন্তু গ্রামের মানুষদের খিদের কথা তিনি বোধহয় শোনার সময় পাননি৷ ভিডিও কনফারেন্স এবং করোনার প্রকোপে লকডাউনের সময়ে এহেন চিত্র সামনে আসায় বেজায় অস্বস্তিতে মোদি সরকার৷ ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে স্থানীয় প্রশাসন ছাড়াও মাঠে নেমেছেন জেলাশাসক৷
বারনাসীর জেলাশাসক কৌশল রাজ শর্মা দাবি করেছেন, ওই শিশুগুলি আখড়ি ডাল ও ছোলা খাচ্ছিল গাছ থেকে৷ ওদের পরিবারের রেশন কার্ড রয়েছে৷ এ মাসের রেশনও তারা পেয়েছে৷ তারপরেও অবশ্য এই ঘটনার পর ওদের বাড়িতে আমরা অতিরিক্ত রেশন পৌঁছে দিয়েছি৷
বুধবার ছয় শিশুকে মাটিতে বসে ঘাস ছিঁড়ে খেতে দেখা যায়৷ স্থানীয় ভাষায় একে ‘আখড়ি’ বলে৷ মুসাহার সম্প্রদায়ের ওই শিশুগুলির বয়স পাঁচ বছর৷ কৈরিপুরের মুসাহার বস্তিতে ওরা থাকে৷
রানি, পুজা, নেরু, বিশাল, সোনি ও গোলু নামের ওই ৬ শিশু খিদে সহ্য করতে না পেরে ঘাস খাচ্ছিল, যা সাধারণত গবাদি পশুর খাদ্য৷ আরেকটি ভিডিওতে শিশুগুলিকে একটি প্লেট থেকে ‘ফালিয়ান’ নামক মটরদানা খেতে দেখা যায়৷ এটিও গবাদি পশুর খাবার৷
এদের মধ্যে কয়েকটি বাচ্চার বাবা দিনমজুর৷ কয়েকজনের বাবা ভিক্ষাও করে৷ এই খবর চাউর হতেই বুধবার পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওদের পরিবারগুলিকে ১০ কেজি চাল, তেল, আলু ও অন্যান্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা হয়৷ পরেও তাদেরকে সাহায্য করা হবে বলে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে৷
ভিডিও আর ছবির মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ফলে হয়তো ওই পরিবারগুলো খাবার পেল৷ কিন্তু লকডাউনের এই দেশে এখন অনেক পরিবারেরই এই অবস্থা৷