বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মানুষকে ঘরে রাখার প্রাণপণ লড়াই ভারত ও পাকিস্তানের

0

গত ১৭ মার্চ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা করেন যে কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে কোনো ধরনের জাতীয় লকডাউন হবে না। তিনি বলেছিলেন, আমরা নগরীগুলো শাটডাউন করে দিলে আমরা তাদেরকে এক দিক দিয়ে করোনা থেকে মুক্ত রাখতে পারব, কিন্তু তারা অন্য দিকে ক্ষুধায় মারা যাবে। কিন্তু এর মাত্র এক সপ্তাহ পর ২১ কোটি পাকিস্তানি তাদের বাড়িঘরে বন্দী হয়ে পড়ে, ২৪ মার্চ থেকে ভারতও তার ১.৩ বিলিয়ন নাগরিককে ঘরে আটকে রেখেছে।

এসব পদক্ষেপে বৈরী প্রতিবেশী দুটি সমন্বিতভাবে কাজ করেনি। বাস্তবে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে খুব কমই। চলতি মাসের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আঞ্চলিক উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনায় শীর্ষ পর্যায়ের ভার্চুয়াল সম্মেলন প্রায় ভণ্ডুল হয়ে যায় কাশ্মির প্রশ্নে তাদের মধ্যকার বিরোধে। মহামারীটি মোকাবিলার ধরনেরও তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ভারতের ২১ দিনের লকডাউন যেখানে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাধ্যমে, সেখানে পাকিস্তানে তা হয়েছে পরিকল্পনাহীনভাবে। শুরু হয়েছে প্রাদেশিক পর্যায় থেকে এবং পরে ইমরান খান তা মেনে নিয়েছেন।

বিধিনিষেধেও আছে পার্থক্য। ভারত কঠোর ও একেবারে সোজাসাপ্টা। অনেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় যাকেই পাচ্ছে, তাকেই পুলিশ আটকাচ্ছে, এমনকি হাসপাতালে গমনরত চিকিৎসকদেরও। কিন্তু পাকিস্তানে তা চলছে শিথিলভাবে। যদিও প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইরানফেরত শিয়া জিয়ারতকারী ও সুন্নিদের ধর্মীয় সমাবেশের মাধ্যমে পাকিস্তানে রোগটি ছড়াচ্ছে, কিন্তু তবুও মসজিদে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েই কাজ সারা হচ্ছে পাকিস্তানে।

বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ মানুষকে ঘরে রাখার এই দুই দেশের চেষ্টার মধ্যে আবার মিলও আছে। চিকিৎসা কাঠামোতে উভয় দেশই পিছিয়ে আছে। চীনে যেখানে প্রতি ১০ হাজার লোকের জন্য ১৮ জন চিকিৎসক ও ৪২টি হাসপাতাল বেড আছে, সেখানে ভারতের আছে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক ও সাতটি হাসপাতাল বেড। আর পাকিস্তানের আছে ১০ জন চিকিৎসক ও ছয়টি হাসপাতাল বেড। ভারতে স্বেচ্ছাসেবক আছে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার। জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের প্রকট অভাব দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের স্বেচ্ছাসেবক আছে মাত্র ২,২০০।

কিন্তু এসবের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যেকোনোভাবেই হোক না কেন ভাইরাসটি যাতে না ছড়াতে পারে। দি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের মতে, সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে সংক্রমণ ৬২ ভাগ কমানো সম্ভব। 

অলসতার পুরস্কার

তবে তা সহজে আসবে না। ইমরান খান ২৪ মার্চ সহায়তা প্যাকেজ হিসেবে ১১ ট্রিলিয়ন রুপির (৭ বিলিয়ন ডলার) কথা ঘোষণা করেন। এছাড়া তিনি জ্বালানির মূল্য হ্রাস ও গরিবদের জন্য অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থা করতে বলেন। আর ভারতের সবচেয়ে গরিব লোকদের খাবার ও অন্যান্য সহায়তা বাবদ ২৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার কথা জানান মোদি। তিনি কৃষকদের জন্যও স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও সহায়তা বাড়াচ্ছে। আবার রাজ্য সরকারগুলো পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম পেনশন দিয়েও সহায়তা করার চেষ্টা করছে। কোথাও কোথায় অভিবাসী নির্মাণশ্রমিকদের আগাম বেতনও দেয়া হচ্ছে। লকডাউনে বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, গাড়ি শিল্প পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে।

তবে সবচেয়ে কঠিন আঘাত লেগেছে অনানুষ্ঠানিক খাতের উপর। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের এই খাতেই রয়েছে ৭০ ভাগের বেশি শ্রমিক। উভয় দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য লকডাউনের চেয়ে খারাপ কিছুই নেই। তারা বদ্ধঘরে থাকা বা গৃহকর্মী ছাড়া জীবনযাপনের কথা ভাবতেই পারে না। আর গরিবদের জন্য তা বিপর্যয়কর। লকডাউনের পর দিল্লির হাজার হাজার গৃহহীনের মনে প্রশ্ন আসে, তারা কোথায় যাবে।

গরিবদের জন্য মানসিক যন্ত্রণা প্রকাশ করেছেন ইমরান খান। আর মোদি শ্রমিকদের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য নিয়োগদাতাদের প্রতি বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি ২১ দিনের লকডাউনে গরিবদের প্রতি সহায় হওয়ার জন্য ধনীদের প্রতি অনুরোধ করছেন। এত সহানুভূতি সত্ত্বেও মোদি কেন মুদি দোকান আর ওষুধের দোকান খোলা রাখাটা অনুমোদন করছেন না। এর ফলে খাবার মজুত করতে হুড়াহুড়ি লেগে যায়। অভিবাসী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সময় না দেয়ার সিদ্ধান্তের ফলে লাখ লাখ গরিব শ্রমিক বিশৃঙ্খল অবস্থায় ফিরে যায়। হাজার হাজার লোক পায়ে হেঁটে অনেক দূরের পথে রওনা হতে বাধ্য হয়। গ্রামে ফেরার জন্য পাকিস্তানেও একই ধরনের লড়াই চলে। ভারতে প্রায় ৫ লাখ ট্রাক চালক তাদের গাড়িতে আটকা পড়ে আছেন। নির্মম পরিহাসের ব্যাপার হলো, এসব যানে করে প্রাণ রক্ষাকারী চিকিৎসা সামগ্রীও পরিবহন করা যাচ্ছে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com