নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ৮ দেশের অনুরোধের পরপরই ফের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
করোনাভাইরাস মোকাবেলার স্বার্থে ইরানের ওপর থেকে মার্কিন এক তরফা নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক চাপ ও অনুরোধ সত্ত্বেও ওয়াশিংটন এ ধরনের অমানবিক কাজ অব্যাহত রেখেছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার ইরানের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ৫টি সংস্থা ও ১৫ ব্যক্তির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আমেরিকা এমন সব সংস্থা ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যারা পুনর্গঠন বিষয়ক কাজে নিয়োজিত ছিল কিংবা এখনও এ কাজে তৎপর রয়েছে। নতুন করে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ইরানের সমুদ্র ও নৌ পথের সেবা কার্যক্রম, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ইরান-ইরাক বাণিজ্য ও পুনর্গঠন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, ইরাকে ইরানের প্রভাব কমানো এবং ইরাক ও ইরানের মধ্যকার বাণিজ্য সহযোগিতাকে ঠেকানো এ নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য।
এভাবে নানা অজুহাতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েই চলেছে ওয়াশিংটন। এমনকি নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়ারও জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না তারা। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরাকসহ আরো অনেক দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইরানের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিস্ময়কর। কারণ ইরানের এ দফতর ইরাকের বিভিন্ন ধর্মীয় পবিত্র স্থানগুলোর পুনর্গঠন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এমনকি জনগণের দেয়া অর্থে এসব পুনর্গঠনের কাজ চালানো হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরান যখন করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে এবং ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর প্রয়োজন তখন দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে বোঝা যায় ট্রাম্প প্রশাসনের ধারণা ওয়াশিংটনের বেআইনি দাবি মেনে নিতে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করার এটাই মোক্ষম সুযোগ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এর আগে ১২টি দাবি মেনে নিতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন যদিও তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করে।
পম্পেও দাবি করেছিলেন, পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে ইরানকে বিরত রাখাই দেশটির ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্য। অথচ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ বহুবার বলেছে, মার্কিন দাবির বিপরীতে ইরানে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং দেশটির পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
চীন ও রাশিয়াসহ ৮টি দেশ ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে চিঠি দেয়ার পরপরই এর প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল।
ওই চিঠিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর রুশ প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ বলেছেন, ইরানের ওপর মার্কিন সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতির সমর্থকরা এ অন্যায় আচরণের পক্ষে সাফাই দিচ্ছেন। ওষুধের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই বলে আমেরিকা ও তার মিত্ররা দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান কোনও পণ্যই আনতে পারছে না।