বাঙালি মেয়ে শোনালেন ইতালি ‘মৃত্যুপুরী’ হয়ে ওঠার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা
খুব বেশিদিন নয়, মাত্র মাসখানেক আগের কথা। তখনও কি কেউ ভেবেছিল এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরী হয়ে উঠতে পারে সুন্দর ছিমছাম ইতালি? বেশিরভাগেরই উত্তর, না! একারণে সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরেও দলবেঁধে সবাই ঘুরে বেড়িয়েছে, শপিংমলে গিয়েছে, পিকনিক করেছে। আর তার ভয়াবহ ফল টের পাচ্ছে এখন।
এমন ভুল যেন আর কেউ আর কোনও দেশ না করে সেই মিনতি জানিয়েছেন প্রবাসী বাঙালি এক নারী। নাম পিঙ্কি সরকার, বাড়ি কলকাতায়। দক্ষিণ ইতালির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। সেখানেই প্রায় একমাস ধরে সবার মতো অবরুদ্ধ রয়েছেন এ নারী।
সম্প্রতি ইতালির ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন পিঙ্কি। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সেটি।
ঠিক কী ঘটেছে ইতালিতে? এ শিক্ষিকার কথায়, ‘জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসকে কেউ সেভাবে পাত্তা দেয়নি। ফলে সংক্রমণ ছড়াতে ছড়াতে এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, বিনা নোটিশে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপরও সবাই ছুটির মুডে টাইমপাস করতে থাকে। রেস্তোরাঁ, শপিংমল, হাট-বাজারে যায়। কারফিউ জারির পরও সবাই ভেবেছিল, ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মাত্র এক মাসের মাথায় সংখ্যাটা ৪০ হাজারের ওপর দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছয় হাজারেরও বেশি।’
পিঙ্কি সবশেষ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সকালেই বিল পাস হয়েছিল, মিউনিসিপ্যাল জোনের বাইরে যাওয়া যাবে না। পুলিশ আটকালেও সেদিন শিক্ষিকা বলে ছাড়া পেয়েছিলেন সহজেই। তারপর থেকেই গৃহবন্দী।
তিনি বলেন, ‘প্রথম প্রথম ঘরে থাকতে ভালো লাগবে। নেটফ্লিক্স, রান্নাবান্না, সবকিছু নিয়ে দিব্যি সময় চলে যাবে। কিন্তু পরে শুরু হবে ডিপ্রেশন। তারপরও বাড়িতেই থাকতে হবে।’
পিঙ্কি সরকার বলেন, ‘কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছি, তাই জানি, মাইক্রোবগুলো এত ছোট যে মাস্কেও আটকায় না। ভাইরাসটি বাতাসবাহিত। যে কোনও জড়বস্তুর ওপর প্রায় ২২ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে।’
একারণে সবার প্রতি তার কাতর মিনতি, ‘ইতালিকে দেখে শিখুন। এই ভুল আপনারা করবেন না। নিজেদের দেশকে আরেকটা ইতালি বানাবেন না।’