করোনায় আক্রান্ত এক তরুণের লড়াই
তারেক সোলাইমান। পেশায় কস্টিউম ডিজাইনার। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। হঠাত করেই সপ্তাহ দুয়েক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই তরুণ। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, খুব দুর্বল অনুভব করেন। ধীরে ধীরে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কাশতে থাকেন। এক পর্যায়ে কাশির সাথে রক্ত বের হতে থাকে। এবং শুরু হয় শ্বাসকষ্ট…।
ইনস্টাগ্রামে নিজের অভিজ্ঞতা এভাবেই বর্ণনা করেন নিউইয়র্কের রু পলস ড্রাগ রেসের এই তরুণ ডিজাইনার।
বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলতে গেলে বেশিরভাগ মানুষই বলেন, এই ভাইরাস তরুণদের চেয়ে বৃদ্ধদের বেশি কাবু করে। এই ভুল ধারণা ছিল তারেকেরও। কিন্তু নিজে আক্রান্ত হয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করার পর তরুণদের সাবধান করেছেন তিনি। নিজের কথাগুলো সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, যাতে তরুণরা সতর্ক হন। করোনাভাইরাসকে অবহেলা করে আক্রান্ত না হন।
ইনস্টাগ্রামে তারেক সোলাইমান বলেন, ‘ঘটনার শুরু ৮ মার্চ। আমার কেমন জ্বর জ্বর লাগছিল। কাঁপছিলাম। দুর্বল লাগছিল। ভেবেছিলাম, সাধারণ ঠাণ্ডা-সর্দি-কাশি। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিল আমার অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। আর সহ্য করতে না পেরে পাঁচ দিন পর আমি হাসপাতালে গেলাম চেক-আপের জন্য। আমি এতটাই অসুস্থ ছিলাম যে, ডাক্তারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। আমাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।’
তারেক বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করার সাথে সাথেই আমাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। আমাকে কিছু না জানিয়েই তড়িঘড়ি করে কিছু টেস্ট করা হয়। তাদের এমন সিরিয়াস অবস্থা দেখে আমি ভয়ে কাঁপছিলাম। মনে হচ্ছিলো, আমি মরে যাচ্ছি।’
তিনি বলতে থাকেন, ‘কোভিড-১৯ টেস্ট করার জন্য তারা আমার হাত থেকে রক্ত এবং নাক থেকে সোয়াব নিলো। এই টেস্টের রেজাল্টের অপেক্ষায় রাতভর আমি ঘুমাতে পারিনি।’
‘আমাকে হাসপাতালে অবসারভেশনে না রেখে ১২ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়। সাথে নির্দেশনা থাকে একটি ওষুধ সেবনের। তারা হয়ত এই ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না।’
তারেকের ভাষ্য, ‘চার দিন পর আমি টেস্টের রেজাল্ট পাই, পজেটিভ। তখনো আমার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল। কারণ এর যে, কোনো চিকিতসা নেই।’
‘এরপরই আমার কাশিতে রক্ত যাচ্ছিলো।’
বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তারেক বলেন, ‘ এখন আমার গায়ে কোনো জ্বর নাই। শ্বাসকষ্ট আছে। ভাইরাসটি আমার ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে।’
তারেকের শারীরিক অবস্থা এখনো ভালো নয়। তারপরও লড়াই করছেন। মানুষকে সাবধানে থাকার কথা বলে যাচ্ছেন। কারণ তিনি যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, চান না অন্য কেউ এর মধ্য দিয়ে যান। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। বলছেন, ‘ঘরে থাকুন। আমি চাই না, আমার মত অবস্থা আর কারো হোক। নিরাপদ থাকুন।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত চার শ’ লোক মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৩৫৬ জন।