রোগী শনাক্ত ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় – ডা. ইকবাল মাহমুদ

0

করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণে আমাদের পর্যাপ্ত কেন্দ্র নেই। আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করতে আমাদের একটি মাত্র বিশেষ প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) যেতে হবে। সারা দেশে আর বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। সুতরাং এদিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ওই প্রতিষ্ঠানে সরাসরি যাওয়া যাবে না। তাদেরকে হটলাইনে ফোন করতে হবে। তারা আসলে সেক্ষেত্রে হাসপাতালের চিকিৎসকের রেফারেন্সের পর চুড়ান্তভাবে শনাক্তকরণ হবে। ফলে রোগী শনাক্ত করা খুব কঠিন হয়ে গেছে।

অনেকগুলো পরীক্ষা কেন্দ্র থাকলে আমাদের রোগী শনাক্ত করতে খুব সুবিধা হতো। ক্রিটিক্যাল ডায়াগনসিস করতে গেলে অনেক রোগীই আছে যাদের ক্লিনিক্যালি দেখা যাবে শরীরে ভাইরাস আছে। কথাগুলো বলছিলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এতদিন বিমানবন্দর, নৌবন্দরসহ সব কিছুই খোলা ছিলো। বিদেশ থেকে আসা শত-সহস্রলোক দেশে প্রবেশ করেছে। এখনও আসছে। আমার দৃষ্টিতে প্রচুর রোগী রয়েছে যারা এখনও সনাক্তকরণ হয়নি বা যায়নি। চল্লিশ বছরের কর্মজীবনে এ ধরনের গলাব্যাথা নিয়ে আগে কখনো এতো রোগী আসেনি। অস্বাভাবিক নিউমোনিয়া বলে একটি কথা আছে- যে ধরনের রোগী এখনকার মত আগে কখনও পাইনি। চিকিৎসকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, রোগীরা আমাদের মুখের ওপর কাশি দিচ্ছে। মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই।

এমন কোনো হাসপাতাল এখন পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি। যখন পুরোপুরি করোনা ভাইরাসের রোগী বেড়ে যাবে তখন সেখানে শুধুমাত্র তাদেরকেই ভর্তি এবং চিকিৎসা করা হবে। কুর্মিটোলা, মুগদা জেনারেল হাসপাতালকে পুরোপুরি করোনা ভাইরাসের রোগীদের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। চিকিৎসকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। পর্যাপ্ত কিছুই নেই। গণমাধ্যমে অনেক প্রচার প্রচারণার পর স্কুল কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেখানে লোকসমাগম হয় যেমন পাবলিক বাসে জ্বর থাকলে উঠা যাবে না, সচিবালয়ে প্রবেশ করা যাবে না। এটা অনেক আগে থেকেই করা উচিৎ ছিল। হাটে-বাজারে করোনা রোগী থাকতে পারে যারা রোগ ছড়িয়ে বেড়াতে পারে। অনেকেই নিজেকে আক্রান্ত হিসেবে ধরা দিতে চায় না। হয়তো সে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বিমানবন্দরে আশকোনা হজ্বক্যাম্পে এতো মশা আছে যে, মশার কামরে জ্বর হয়ে যেতে পারে। করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু হলে তাদের বাঁচানো মুশকিল হয়ে যাবে। আমাদের দেশের মানুষের শরীরে প্রোটিনের পর্যাপ্ত অভাব থাকায় রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেক কম। আমাদের দেশে প্রবীন লোকের সংখ্যা ইউরোপ-জাপানের তুলনায় অনেক কম। এটা একটি ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, আমরা অনেক বেশি ফলাও করছি, সংবাদ সম্মেলন করছি কিন্তু অতোটা ক্ষমতা আমাদের নেই করোনা মোকাবিলা করার। করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে। তারা (রোগী) যে জিনিস স্পর্শ করবে বিশেষ করে প্লাস্টিকের ওপর তিনদিন, ফ্লোরে একদিন, বাতাসে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে পারে।

এটা বেশি ছোঁয়াচে। সার্সের চেয়ে বেশি ছোঁয়াচে হচ্ছে করোনা ভাইরাস। এখন যে অনেক রোগী নেই তার কি প্রমাণ আছে। প্রতিবেশি দেশ ভারত, পাকিস্তানে লাফিয়ে লাফিয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা হয়তো প্রকাশ করছি না। খুব শিঘ্রই প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ হবে বলে মনে করছি। যখন প্রকাশিত হবে তখন দেখা যাবে অনেক বেশি সংখ্যায় হয়ে গেছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারি প্রচার-প্রচারণা যথেষ্ঠ। তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন, আমাদের দেশে যেহেতু অশিক্ষিত-অসচেতন রোগীর হার খুব বেশি। সচেতন লোকের খুব অভাব। এদেরকে সচেতন করা, যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা, হাত ধোয়ার জন্য দামি নয় বেশি ক্ষারযুক্ত বাংলা কাপড় কাঁচার সাবান সবচেয়ে বেশি কার্যকর, হাতের তালুতে যে হস্তরেখা আছে সেগুলোকে খুচিয়ে খুচিয়ে পরিষ্কার করা, ঘনঘন পানি খাওয়া, কারণ, করোনা ভাইরাস গলায় সবচেয়ে বেশি আটকে থাকে, ঠান্ডা খাবার না খেয়ে গরম খাবার খাওয়া, মাছ-মাংস বেশি সময় নিয়ে রান্না করা, বেশি বেশি ফলমুল শাক-সবাজি খাওয়া, মাছ-মাংসের বাজারে যত কম যাওয়া যায় এ বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে। সরকারিভাবে ১০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে পরীক্ষ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু ক’জন রোগীকে পরীক্ষা করা হয়েছে বা পরীক্ষা করতে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে বড় কথা। যদি আরো অনেক পরীক্ষাগার থাকতো তাহলে হয়তো অনেক বেশি সংখ্যায় রোগী আমাদের দেশে আছে জানা যেতো। একটি মাত্র পরীক্ষা কেন্দ্র।

যেখানে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ নেই। অনেক জটিল প্রক্রিয়া। আমি মনে করি, এই প্রক্রিয়াটা আরো সহজ করা উচিৎ। যাতে পরীক্ষা ব্যবস্থাটা অনেক বেশি মানুষের নাগালে থাকবে। অনেক মানুষ নিশ্চিত হতে চায় তাদের করোনা আছে কি না। কিন্তু (আইইডিসিআর) ওখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ব্যক্তি আছে যারা আক্রান্ত রোগীর কাছে ছিলো। যারা হাটে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টিন সম্পর্কে এই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসেন তারা হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে চায় না। তাদেরকে অবশ্যই হোম আইসোলেশনে রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মুশকিল হচ্ছে একটি মাত্র টয়লেট, থাকার ঘর ইত্যাদি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা হচ্ছে। হোম আইসোলেশন মানে শতভাগ আইসোলেশন করতে হবে। হাতে গ্লাভস, ফেসমাস্ক, ১৪ দিন কারো সঙ্গে সাক্ষাত করতে না দেয়া, ঘরের বাইরে বের না হওয়া। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সঙ্গে সবাই দেখা করতে যাচ্ছে। এখনো মানুষ হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ওয়াজ মাহফিল চলছে। জুমার খুতবায় এ বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে না। জানামতে, গ্রামে গঞ্জে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তি বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দোকানে চা খাচ্ছে। তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে বাসায় রাখা উচিৎ ছিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তিনফুট দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। মাথা নিচু করে হাতের কনুয়ে মুখ ঢেকে কাশি দিতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com