দিল্লি সহিংসতা: উত্তাল পার্লামেন্ট, ‘বিজেপি মুর্দাবাদ’ স্লোগান
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হলো দেশটির পার্লামেন্টের ভেতরে ও বাইরে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগের দাবিতে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই সোচ্চার ছিল কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, বিএসপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, তুমুল প্রতিবাদের মুখে পড়ে দিল্লি সহিংসতা নিয়ে ‘পরে আলোচনা’ করা হবে বলে জানিয়েছে বিজেপি সরকার। বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের জেরে এই দিনের মতো মুলতবি করা হয় রাজ্যসভা। লোকসভার অধিবেশনও মুলতবি হয়েছে দফায় দফায়।
সোমবার থেকে পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। চলবে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
এনডিটিভি জানায়, দিল্লির সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেন বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ। এ বিষয়ে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখুন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
তিনি বলেন, ‘চার দিন ধরে দিল্লি সহিংসতায় সময় ঘুমিয়ে ছিল কেন্দ্রীয় সরকার।’
সংসদের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেছেন, অবশ্যই এটা আলোচনার বিষয়। তাই আমি আলোচনার জন্য সময় স্থির করব। কিন্তু আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। আমাদের দেখা উচিত কোন পথে স্বাভাবিক করা যায় পরিস্থিতি তারপরেই আলোচনা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে শপথ নেব।
যদিও দিল্লির ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিতে নারাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি চান পার্লামেন্টের রীতি মেনেই বিষয়টা উত্থাপিত হোক, এক সূত্র জানায়।
এদিন পৃথকভাবে গান্ধী-মূর্তির পাদদেশে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আপ, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের প্রত্যেকের দাবি, দিল্লি সহিংসতা নিয়ে তাদের প্রশ্নের জবাব দিক সরকার।
কংগ্রেস এমপি শশী থারুর, রাহুল গান্ধী ও অধীর চৌধুরীকে দেখা গিয়েছে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাতে। তারাও অমিত শাহের প্রতিবাদ জানান।
এদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগান তুলতে দেখা গিয়েছে আম আদমি এমপি সঞ্জয় সিং, ভগবান মান, এনডি গুপ্তা ও সুশীল গুপ্তাকে।
গত সপ্তাহে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে দুই শতাধিক, যাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অন্তত ৭০ জন। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মী ও গোয়েন্দা কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১১ জন পুলিশকর্মী।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দেখা যায়। কোথাও আবার নিজ হাতে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙেছে পুলিশ।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানায়, রবিবার পরপর ছয়বার গোয়েন্দা সতর্কবার্তা দেয়ার পরও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি দিল্লির পুলিশ। চার দিনেরও কম সময়ে পুলিশের কাছে ১৩ হাজারের বেশি ফোনকল গেছে। এরপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় পুলিশ।