গৃহহীনদের ৫৬টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের ৫৬টি ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট, বালু ও রড ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘরের নকশাও পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পে ৫৬টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘর তৈরির খরচ দেয়া হয় দুই লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৫ টাকা।
নকশা অনুযায়ী, দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর হবে ২০ ফুট লম্বা ও প্রস্থ হবে ৮ ফুট। চারদিকে ইটের দেয়াল আর উপরে ৪৬ মিলিমিটার রঙিন ঢেউটিন দিয়ে ছাউনি দিতে হবে। ঘরের ছাউনির কাজে মেহগনি কিংবা কড়াই কাঠ ব্যবহারের কথা। ঘরের মেঝেতে তিন ইঞ্চি ইটের ঢালাই দেয়ার কথা। রান্নাঘর ও টয়লেট হবে ১৩ ফুট। কিন্তু বাস্তবে ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে সরেজমিনে প্রতিটি ঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট কম, রড কম এবং নিম্নমানের টিন দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব নিয়ে কথা বললে ঘরবঞ্চিত হওয়ার ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। এসব অনিয়ম মেনেই ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছন সুবিধাভোগীরা।
নিম্নমানের ঘর নির্মাণের বিষয়ে একাধিক সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব নিয়ে কথা বললে ঘর দেয়া হবে না তাদের। এই ভয়ে মুখ খুলছেন না তারা। নানা অনিয়মের তথ্য দিলেও গণমাধ্যমে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন সুবিধাভোগীরা।
সুবিধাভোগীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, সরকারি এসব ঘর বরাদ্দ দিতে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণের জায়গায় মাটি ও বালু ভরাটের কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের সুটিয়া গ্রামের রিপন হোসেন বলেন, ঘর বরাদ্দের নামে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ৪৭ হাজার টাকা নিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। ঘর নির্মাণে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে বানানো হয়েছে ঘর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভোগীর ভাষ্য, ঘর নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে আমাদের ঘর দেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে ঝামেলা করবে পিআইসি। এজন্য সব অনিয়ম মেনেই ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় আছি আমরা।
বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, বিধি অনুযায়ী দরিদ্রদের মাঝে সরকারি ঘর বরাদ্দ দিয়েছি। কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। আমার নাম করে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে সে দায়-দায়িত্ব আমি নেব না। আমার নামে যারা অপপ্রচার করছে তারা কোনোভাবেই টাকা নেয়ার বিষয় প্রমাণ করতে পারবে না। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে সুবিধাভোগীদের হুমকি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টগর বলেন, আমি দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার দায়িত্ব পালন করি। একার পক্ষে দুটি অফিসের সব কাজ সামাল দেয়া কঠিন। তারপরও কাজের ব্যাপারে অভিযোগ যখন উঠেছে তখন পরিদর্শন করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধানের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ঘর বরাদ্দের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি ঘর নির্মাণের ব্যাপারে যেভাবে নির্দেশনা আছে সে ভাবেই করতে হবে। অনিয়ম হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।