সিলেটে অভিনব কায়দায় চলছে পুলিশের রমরমা টোকেন বাণিজ্য

0

সিলেটে অভিনব কায়দায় চলছে পুলিশের রমরমা টোকেন বাণিজ্য। পট পরিবর্তনের পর কিছু দিন থেমে থাকলেও নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে তাদের এ টোকেন বাণিজ্য। এর আগে অর্থের বিনিময়ে পরিবহণের সামনের গ্লাসে টোকেন স্টিকার লাগিয়ে পরিবহণ চলাচল করত। তবে এখন টোকেন বাণিজ্যের কৌশল পালটেছে পুলিশ।

৫ আগস্টের পর থেকে টোকেন মোবাইলের পেছনে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর নাম দেয়া হয়েছে স্টিকার। স্টিকার বাবদ এজেন্টের মাধ্যমে আগে নেওয়া হতো ৬০০ টাকা এখন তা দ্বিগুণ করা হয়েছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ-এসএমপির ট্রাফিক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তার নেতৃতে এ টোকেন বাণিজ্যের ভাগ এসএমপি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন। পুলিশের বড় কর্তারা এ বাণিজ্যের কথা জানলেও বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে, পুলিশের দাবি এ বাণিজ্যের সঙ্গে তারা জড়িত নয়। একটি অপরাধ সিন্ডিকেট জড়িত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্টিকারের মতো চালকের মোবাইল ফোনের পেছনে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ টোকেন। টহল বা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালে মোবাইল বের করে দেখালেই মেলে দ্রুত ছাড়ের সিগন্যাল। না হলে নানা অজুহাতে আটকানো হয় গাড়ি। মাঠপর্যায়ের ৩ জনকে দিয়ে এ টোকেন বাণিজ্য চলছে। তাদের সঙ্গে জড়িত আছেন সিলেট জেলা পুলিশের কিছু কর্মকর্তাও। পতিত সরকারের আমল থেকে এ বাণিজ্য করে এই তিন দালাল রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আর পুলিশ কর্মকর্তাদের পকেটে তুলে দিয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে টোকেন বাণিজ্যে ভাটা পড়ে। মাঝখানে কিছুদিন পুলিশও ছিল নিষ্ক্রিয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার স্বরূপে ফিরেছেন সার্জেন্টরা।

সংশ্লিষ্ট এমন একাধিক সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এসএমপির অনেক কর্মকর্তা বদলি হলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসাবে পরিচিত ও চিহ্নিতরা এখনও বহাল রয়েছেন। যাদের মধ্যে পতিত সরকারের একাধিক সংসদ-সদস্যের আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত ‘সিলেটি সার্জেন্ট’ও রয়েছেন। যারা নেতাদের পরিচয়ে পুলিশে ক্ষমতার চড়ি ঘুরাতেন। তারাই ট্রাফিক বিভাগের টোকেন বাণিজ্য দেখভাল করছেন। টিআই, সার্জেন্ট/টিএসআই, এটিএসআই পদবিধারী কর্মকর্তারা এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। টোকেন হিসাবে স্টিকার দিয়ে এসব পুলিশ সদস্য ও দালালরা প্রতি মাসে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে তুলছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। যার ভাগ পায়, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ-এসএমপির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাসহ নগরী ও পার্শ্ববর্তী সিলেট জেলা পুলিশের সব থানা। বিশেষ করে সিলেট সদর দক্ষিণ সুরমা, মোগলাবাজার, শাহপরান, এয়ারপোর্ট, জালালাবাদ, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, উসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোপালগঞ্জ থানাগুলো টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এর ভাগ পায় জেলা পুলিশের একটি চক্রও।

কয়েকজন চালক জানান, সিলেটে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের সুযোগ করে দিতে যখন পুলিশ অবৈধভাবে টোকেন বাণিজ্যে নামে, তখন গাড়ি প্রতি মাসে ৬০০ টাকায় নেওয়া হতো। ৫ আগস্টের পর টোকেনের দাম চলে যায় গাড়িপ্রতি এক হাজার টাকায়। নভেম্বর থেকে থেকে নতুন কৌশলে স্টিকার চালু হওয়ার পর এটি কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৩০০ টাকায়। শোরুম থেকে কেনা নতুন অটোরিকশা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে চুরি করে আনা চোরাই গাড়ি চলে এই টোকেন দিয়ে।

এ ব্যাপারে এসএমপি পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, নভেম্বর থেকে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অভিযানের মাধ্যমে এগুলোকে নির্মূল করা হয়েছে। আগে গাড়ির গ্লাসে এগুলো ছিল। অভিযানের কারণে উধাও হয়ে গেছে। টোকেনের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক নেই। এগুলোর সঙ্গে দালাল চক্র জড়িত রয়েছে। তারাই পুলিশের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে।

কারা এই অপকর্ম করছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ভার্থখলা ও আলমপুরের ৩-৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। অসাধু এই পন্থার যারা উপার্জন করছে তাদের চিহ্নিত করে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com